আমাদের অনেকের কাছে কুকুর সেরা বন্ধু। কিন্তু আমরা কী কখনো ভেবে দেখেছি যে আমরা হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে গেলে বা না থাকলে আমাদের কুকুরের কী হবে? মানুষের অবর্তমানে গৃহপালিত কুকুরের কীভাবে চলবে? যদিও বিশ্বের এক বিলিয়ন বা তারও বেশি কুকুরের অন্তত ৮০% প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন, মুক্ত জীবনযাপন করে – এবং তাদের থেকে কিছু সূত্র পাওয়া যায়।
পৃথিবীর সবচেয়ে সফল গৃহপালিত প্রজাতির শিরোনামে রয়েছে কুকুর। শত সহস্র বছর ধরে তারা আমাদের সজাগ দৃষ্টির মধ্যে বড়ো হয়েছে। অতি সম্প্রতি, মানুষ কতৃক বাছাই করা প্রজননের কারণে কুকুরের মধ্যে বৈচিত্র্য দেখা গেছে যেমন বৃহদাকার গ্রেট ডেন থেকে ক্ষুদ্র চিহুয়াহুয়া। সঙ্গী হিসেবে কুকুরকে আরও নিখুঁত করার জন্য মানুষের এই অনুসন্ধানের ফলস্বরূপ ৪০০-রও বেশি আধুনিক কুকুরের প্রজাতির শারীরিক এবং আচরণগত বৈশিষ্ট্যের অনন্য সংমিশ্রণ ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে, কুকুরের প্রজনন করা হয়েছিল যাতে আমাদের অর্থাৎ মানুষের কাজে লাগে যেমন- পশুপালন, শিকার এবং পাহারা দেওয়া। কিন্তু এই নতুন অভ্যাসটি বিগত ২০০ বছর ধরে দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে কুকুরকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য তাদের চেহারার উপর বেশি জোর দিতে শুরু করে মানুষ। প্রজননকারীরা এতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কোন বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে তার ওপর প্রজননের ভবিষ্যত নির্দিষ্ট হয়।
আমাদের অনেকের চ্যাপ্টা মুখো কুকুর পছন্দ কিন্তু তাদের নাকের প্যাসেজ এবং সংক্ষিপ্ত শ্বাসনালীর কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য তাদের বেশ কষ্ট করতে হয়। এর ফলে তাদের হাঁপানির মতো আক্রমণের সম্মুখীন হতে হয়। লম্বা মুখের কুকুরদের তুলনায় তাদের ত্বকের, চোখের এবং দাঁতের সমস্যা অনেক বেশি হয়। অনেক আধুনিক কুকুর প্রজননের জন্য মানুষের চিকিৎসার উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্রেঞ্চ বুলডগ এবং চিহুয়াহুয়াদের প্রায়ই সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজন হয়, কারণ কুকুরছানাগুলোর মাথা মায়ের পেলভিক অঞ্চলের প্রস্থের তুলনায় অনেক বড়ো। প্রজননের জন্য অস্ত্রোপচারের উপর এই নির্ভরতা কুকুরের উপর বাছাই করে প্রজননের গভীর প্রভাবকে তুলে ধরে।
যদি কল্পনা করা যায় এমন এক বিশ্ব যেখানে কুকুরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মানুষ অনুপস্থিত, তখন কিন্তু কুকুরের উপর তার প্রভাব বেশ তীব্র হবে। খাদ্য, বাসস্থান এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক চাহিদার জন্য আমাদের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল জাতগুলো মোটেও ভালো থাকবে না। তারা মানিয়ে নিতে লড়াই করবে, এবং অনেকে মানুষের সহায়তা ছাড়া জীবনের কঠোর বাস্তবতার কাছে আত্মসমর্পণ করবে। এটি সম্ভবত আমাদের বাড়িতে বসবাসকারী ২০ শতাংশেরও কম কুকুরকে প্রভাবিত করবে। বিশ্বের বেশিরভাগ কুকুর একাএকাই জীবনযুদ্ধে লড়াই করে এবং ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়া জুড়ে বাস করে। কিন্তু যদিও এই কুকুরগুলো আক্ষরিক অর্থে গৃহপালিত নয়, কিন্তু তারা এখনও মানুষের সাথে সহাবস্থান করে। যেমন, তাদের বেঁচে থাকা প্রায় একচেটিয়াভাবে মানুষের তৈরি সম্পদ যেমন আবর্জনার স্তূপ, বা খাবারের উপর নির্ভর করে। মানুষ না থাকলে, প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্রুত কার্যকর হবে। যে কুকুরগুলোর বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য যেমন অভিযোজন ক্ষমতা, শিকারের দক্ষতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, এবং সামাজিকতার অভাব রয়েছে তাদের সংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। আবার যে কুকুরগুলো হয় অত্যন্ত বড়ো বা অত্যন্ত ছোটো তাদেরও অসুবিধা হবে, কারণ কুকুরের আকারের উপর নির্ভর করে তার খাবারের চাহিদা, পরিবেশ অনুযায়ী শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ। যে সব প্রজাতির কুকুর নতুন এলাকা অন্বেষণ করতে খুব লাজুক তাদেরও ক্ষতি হবে। শেষ পর্যন্ত, একটি ভিন্ন ধরনের কুকুর আবির্ভূত হবে, মানুষের ইচ্ছানুসারে নয় বরং তার স্বাস্থ্য এবং আচরণের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী। কুকুর বংশের উপর ভিত্তি করে সঙ্গী নির্বাচন করে না, এবং সুযোগ পেলে ভিন্ন দেখতে সাথীর সাথে মিলিত হবে। সময়ের সাথে সাথে, কুকুরের স্বতন্ত্র জাতগুলো শেষ হয়ে যাবে এবং অনিয়ন্ত্রিত মিলনের ফলে প্রত্যন্ত আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ান সম্প্রদায়ের “ক্যাম্প কুকুর” এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেখা কুকুরের মতো “গ্রামের কুকুর” জন্ম নেবে। এই কুকুরগুলো সাধারণত মাঝারি আকারের, বিভিন্ন রঙের হয় ও তাদের কান খাড়া ও লেজ থাকে। সময়ের সাথে সাথে কুকুরগুলো বন্য জীবনধারায় ফিরে আসবে। এই “পুনরায় বন্য” কুকুরগুলো সম্ভবত তাদের বর্তমান বন্য প্রতিরূপের মতো সামাজিক আচরণ দেখাবে ও খাবার খাবে। এই রূপান্তরটি নির্দিষ্ট প্রজাতির জন্য অর্থাৎ যারা বন্য পরিবেশে ঘুরে বেড়ায় এবং যারা ইতিমধ্যে বন্য বা গ্রামের কুকুর হিসাবে স্বাধীনভাবে বসবাস করছে তাদের জন্য আরও সম্ভব হবে।