দীর্ঘস্থায়ী চাপের কারণে মানসিক এবং শারীরিক ব্যাধি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সমাজে যার উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ছে। তারা পুরুষ এবং মহিলা উভয়কেই প্রভাবিত করে, তবে একইভাবে নয়। নানাভাবে বোঝা যায় যে পুরুষ এবং মহিলা মানসিক চাপের সাথে ভিন্নভাবে মোকাবিলা করে, কিন্তু এই পার্থক্যের পিছনের কারণ এখনও সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায় নি। তার ফলে এই ক্ষেত্রে, পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য ব্যক্তিগতকৃত আলাদা চিকিত্সা পদ্ধতি এখনও নাগালের বাইরে।
সেল রিপোর্টে প্রকাশিত গবেষণায়, ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট এবং মিউনিখের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির অধ্যাপক অ্যালন চেনের যৌথ গবেষণাগারের গবেষকরা ইঁদুরদের ওপর করা গবেষণায় আবিষ্কার করেছেন যে মস্তিষ্কের কোশগুলোর একটা উপশ্রেণি পুরুষ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে চাপের প্রতিক্রিয়া জানায়। এই ফলাফলগুলি দীর্ঘস্থায়ী চাপের প্রভাবে স্বাস্থ্যের অবস্থা কী হয় তা ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে। যেমন উদ্বেগ, বিষণ্নতা, এমনকি স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে কী হয় এবং এই ব্যাধিগুলির জন্য মহিলা ও পুরুষদের জন্য আলাদা থেরাপির পথ প্রশস্ত করতে পারে।
তারা মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের প্যারাভেন্ট্রিকুলার নিউক্লিয়াস (PVN) অংশ নিরীক্ষণ করেছেন, যা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে চাপের প্রতিক্রিয়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চল হিসেবে কাজ করে। মস্তিষ্কের সেই অংশের প্রতিটা কোশীয় স্তরে আরএনএ অণুগুলিকে সিকোয়েন্স করে, তিনটে প্রধান অক্ষ বরাবর পুরুষ এবং মহিলা ইঁদুরের চাপের প্রতিক্রিয়া বিশদভাবে রেকর্ড করতে তারা সক্ষম হয়েছেন। এই গবেষকরা ৩৫০০০-এরও বেশি কোশের জিনের অভিব্যক্তি ম্যাপ করেছেন। তিনটে প্রধান অক্ষ হল- মস্তিষ্কের সেই অংশের প্রতি ধরনের কোশ কীভাবে চাপের প্রতিক্রিয়া জানায়; কিভাবে প্রতিটা কোশ পূর্বে দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেসের সংস্পর্শে আসার অভিজ্ঞতা থাকলেও নতুন স্ট্রেসে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়; এবং পুরুষ ও মহিলা ভেদে কীভাবে এই প্রতিক্রিয়া আলাদা হয়।
কিছু কোশ মহিলাদের ক্ষেত্রে চাপের প্রতি বেশি সংবেদনশীল আবার পুরুষদের মধ্যে অন্য কিছু কোশ সংবেদনশীল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পাওয়া গেছে অলিগোডেনড্রোসাইট নামক এক ধরণের মস্তিষ্কের কোশে – এটা গ্লিয়াল কোশের একটি উপ-প্রকার যা স্নায়ু কোশকে সহায়তা দেয় এবং মস্তিষ্কের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুরুষদের মধ্যে চাপের পরিপ্রেক্ষিতে, বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী চাপ, শুধুমাত্র এই কোশগুলোর জিনের অভিব্যক্তি এবং আশেপাশের স্নায়ু কোশগুলোর সাথে শুধু তাদের মিথস্ক্রিয়া নয় এমনকি তাদের গঠনও পরিবর্তন করে। কিন্তু মহিলাদের মধ্যে, এই কোশগুলোতে কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি এবং তারা চাপের পরিবেশে উন্মুক্ত থাকলেও সংবেদনশীল ছিল না।
ডঃ জুয়ান পাবলো লোপেজ জানান, নিউরন সবসময় বৈজ্ঞানিকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে, কিন্তু তারা মস্তিষ্কের সমস্ত কোশের মাত্র এক তৃতীয়াংশ। তারা যে পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন, তা মস্তিষ্ক কোশের আরও সমৃদ্ধ এবং পূর্ণাঙ্গ চিত্র দেখতে দেয়, এবং তাদের মিথস্ক্রিয়া বোঝা যায়। গবেষকরা জানিয়েছেন, আগে বিভিন্ন ক্লিনিকাল ট্রায়ালে মহিলাদের নেওয়া হত না, কারণ তাতে মহিলাদের বিভিন্ন বয়সে হরমোনের প্রভাবের জন্য গবেষণায় জটিলতা বাড়ে। কিন্তু মস্তিষ্ক নিয়ে এই গবেষণা থেকে বোঝা যায়, পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের ট্রায়ালে আনা প্রয়োজন।