রোগের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে তৃতীয় স্থান অধিকার করে নিয়েছে মানসিক অবসাদ। পূর্বের গবেষণা থেকে জানা যায় যে মানসিক অবাসাদের কারণে হার্ট অ্যাটাক, বুকে ব্যথা, স্ট্রোক এবং হার্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মানসিক অবসাদে আক্রান্ত মহিলাদের পুরুষের তুলনায় হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকার প্রবণতা দেখা গেছে, যদিও মানসিক অবসাদের প্রভাবে লিঙ্গভেদে কীভাবে হার্টের ক্ষতি হয় সে বিষয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে। এই সূত্রে গবেষকরা ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে JMDC ক্লেইমস ডেটাবেস ব্যবহার করে একটি পর্যবেক্ষণমূলক সমন্বিত সমীক্ষা পরিচালনা করে। তারা ৪,১২৫,৭২০ জন অংশগ্রহণকারীকে চিহ্নিত করে যারা গবেষণার মানদণ্ড পূরণ করেছে। অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ছিল ৪৪ (৩৬-৫২) বছর, এবং এদের মধ্যে ২,৩৭০,৯৮৬ জন অংশগ্রহণকারী পুরুষ ছিল। গবেষণার ফলাফল প্রমাণ করে যে মানসিক অবসাদের কারণে হৃদরোগের প্রভাবে মানসিকঅবসাদগ্রস্ত এবং মানসিকঅবসাদমুক্ত মানুষদের অনুপাত পুরুষদের ক্ষেত্রে ১.৩৯ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১.৬৪। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, এনজিনা পেক্টোরিস, স্ট্রোক, হার্ট ফেলিওর এবং এট্রিয়াল ফিব্রিলেশনের ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি।
ব্যক্তিগত জীবনের ওঠাপড়া, সম্পর্কের জটিলতা, বাড়ি আর কর্মক্ষেত্র দুই-ই সামলাতে গিয়ে শারীরিক ভাবে একটা ক্লান্তি চলে আসে মহিলাদের। সেই ক্লান্তি কখনও কখনও হানা দেয় মনে। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদের কারণ যে শুধুই ব্যক্তিগত জীবনের ঝড়ঝাপটা, তা নয়। শরীরের অভ্যন্তরেও এমন অনেক সমস্যা ঘটে, যেগুলোর কারণে মানসিক অবসাদ হানা দেয়। একটি বয়সের পরে মহিলাদের ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায় । ঋতুবন্ধের সঙ্গে সঙ্গে নারী শরীরে ক্ষরিত হওয়া হরমোনগুলোর সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ঋতুবন্ধের পর প্রায় ২০ শতাংশ মহিলা মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এই সময়ে শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা একেবারে নীচে নেমে যায়। উপকারী হরমোন নামে পরিচিত সেরাটোনিন ক্ষরণও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শারীরিক ভাবে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানসিক ভাবেও দুর্বল হয়ে পড়ে তারা। এছাড়াও বিভিন্ন কারণ যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা মহিলাদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের প্রবণতা বৃদ্ধি করে। পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবহার এবং চিকিত্সা করানোর ক্ষেত্রে পার্থক্য এবং লিঙ্গ-ভেদে জিনগত বা হরমোনের পার্থক্যও মহিলাদের হার্টের রোগের বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে রয়েছে এক গভীর যোগসূত্র তাই মনের যত্ন নিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।