আমাদের গ্রহের উপর থেকে কক্ষপথে একজন মানুষকে ছুঁড়ে বের করতে প্রায় আট মিনিট সময় লাগে, তখন তাদের শরীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির এমন একটি ধাক্কার মুখোমুখি হয় যা পৃথিবীতে কিছুই অনুভূত হয়না। ইউরোপীয় স্পেস অবজারভেটরির লার্জ ডায়ামিটার সেন্ট্রিফিউজে বিজ্ঞানীরা এখন পরীক্ষা করছেন যে এই বিশাল উৎক্ষেপণটি নভোচারীর রক্তের কোশগুলির ঝিল্লিকে দুর্বল করে, তাদের কোশগুলি ফাটিয়ে ফেলে কিনা। গবেষণায় দেখা গেছে মহাকাশে ভ্রমণের পরে সাধারণত পৃথিবীতে থাকার তুলনায় মানবদেহের প্রায় ৫৪ শতাংশ বেশি লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হয়। যা রক্তের প্রবাহে লৌহ পরিবহনের প্রাপ্যতা কমিয়ে দেয়। গবেষকরা মনে করেন যে এই জন্য নভোচারীরা স্বাভাবিক মাধ্যাকর্ষণে ফিরে আসার পর প্রায়ই ক্লান্তি, দুর্বলতা বা মাথা ঘোরার শিকার হন। তাদের রক্তের কোশগুলি মাইক্রোগ্রাভিটি বা খুব কম মাধ্যাকর্ষণ অবস্থা থেকে বেরিয়ে সামঞ্জস্যরক্ষা করার চেষ্টা শুরু করে।
মহাকাশচারীরা মহাকাশে উৎক্ষেপণের সময় দুটি বড় শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান, মাইক্রোগ্রাভিটিতে যাওয়ার পূর্বে তারা প্রথমে একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য তীব্র হাইপারগ্রাভিটি অনুভব করেন। তাই পরবর্তীতে মহাকাশে রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়ার জন্য এই প্রাথমিক পর্যায়ের প্রভাবগুলির উপর গবেষকরা তদন্ত করছেন। বিজ্ঞানীদের আরেকটি দল আবিষ্কার করেছিলেন যে রক্তকণিকা মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে ফেটে যেতে পারে এবং সম্ভবত তার জন্য স্পেস অ্যানিমিয়া হতে পারে। শ্যাভেজ এবং তার দল বোঝার চেষ্টা করেছিলেন যে হাইপারগ্র্যাভিটির জন্য অনুরূপ কিছু ঘটতে পার কিনা। তাই তারা এই বিষয়ে গবেষণার জন্য ESA-এর মালিকানাধীন নেদারল্যান্ডে অবস্থিত একটি ৮-মিটার-প্রশস্ত সেন্ট্রিফিউজ মেশিন ব্যবহার করেন। এটি পৃথিবীর মহাকর্ষের ২০ গুণ পর্যন্ত হাইপারগ্রাভিটি অনুকরণ করতে পারে। মহাকাশ উৎক্ষেপণে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির তিন থেকে ছয় গুণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রয়োগ হয়ে থাকে। ইঁদুরের উপর পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে হাইপারগ্র্যাভিটির অবস্থার অধীনে শ্বেত রক্তকণিকা ধ্বংস হতে পারে এবং হাইপারগ্রাভিটি কোশগুলিকে দুর্বল করার লক্ষণও দেখায় যা ইঁদুরের রক্ত প্রবাহ এবং মস্তিষ্কের মধ্যে একটি বাধা তৈরি করে। এর ভিত্তিতে, শ্যাভেজ এবং সহকর্মীরা সেন্ট্রিফিউজে হাইপোটোনিক দ্রবণে সিক্ত মানুষের লোহিত রক্তকণিকাগুলি দিয়েছেন। সেন্ট্রিফিউজ মেশিনটিকে পৃথিবীর স্বাভাবিক মাধ্যাকর্ষণ, এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের ৭.৫ গুণ, ১৫ গুণ অনুপাতে চালানো যায়। প্রতিটি পরীক্ষা ১০ মিনিট, ৩০ মিনিট বা ৬০ মিনিটের জন্য করা যাবে। তারপরে রক্তের কোশগুলি কীভাবে কাজ করে তা দেখতে বিশ্লেষণ করা হবে। গবেষণা চলমান রয়েছে, তাই এখনও সেন্ট্রিফিউজে ঘোরা রক্তের বিশ্লেষণ পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা এখনও খুব কম জানেন যে কীভাবে পরিবর্তিত মাধ্যাকর্ষণ মানবদেহকে প্রভাবিত করে। শ্যাভেজের দল সেই রহস্যের বুদবুদ ফাটিয়ে দিতে পারেন।