মানুষের মধ্যে অসুখ তৈরি করতে পারে এরকম জীবাণু প্রায়ই অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। আর যখন অন্য প্রাণীর থেকে তা মানুষের শরীরে আসার ক্ষমতা অর্জন করে, তখন তা রোগের চলাচলের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব পায়। বহুদিন ভাবা হত কুষ্ঠরোগের জীবাণু শুধু মানুষকেই সংক্রামিত করতে পারে। এই জীবাণুর নাম মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রী। ২০১৬ সালে বিজ্ঞানীরা সন্ধান পান যে, এক বিশেষ প্রজাতির লাল কাঠবেড়ালী যার বিজ্ঞানসম্মত নাম স্কিরাস ভালগারিস, তারাও এই একই ব্যাক্টেরিয়া দিয়ে সংক্রামিত হতে পারে। কিন্তু মানুষের জীবাণু আর কাঠবেড়ালীর জীবাণুর মধ্যে কোন যোগাযোগ থাকতে পারে কি? মানে একদিক থেকে জীবাণু কি অন্যদিকে পৌঁছতে পারে? ঠিক চলাচলের প্রমাণ এখনও না মিললেও প্রত্নতত্ত্বের বিশেষ শাখা জিন প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করে টুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন যে মধ্যযুগের লাল কাঠবেড়ালীর হাড়ের মধ্যে কুষ্ঠ জীবাণুর সংক্রমণ ঘটত। দশম এবং ত্রয়োদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের বারোটি কাঠবেড়ালীর হাড়ের জিনগত পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে সেখানে “মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রী”-র পদচিহ্নের প্রমান আছে। মধ্যযুগের এই লাল কাঠবেড়ালীর থেকে পাওয়া জীবাণুর সাথে মিল সবথেকে বেশী ঐ একই সময়ের কুষ্ঠরোগীদের জীবাণুর সাথে। সেই জন্য ভাবা হচ্ছে মধ্যযুগে কাঠবেড়ালী এবং মানুষের মধ্যে কুষ্ঠের জীবাণুর যাতায়াত ছিল। এ উত্তর মেলেনি যে, কে প্রথম? মজার ব্যাপার মধ্যযুগের ইংল্যান্ডে কাঠবেড়ালীর পোষার একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক চল ছিল।
অসুখের বিবর্তন এবং পরিবেশের মধ্যে তার চলাচলের এই খবর বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। অসুখের কারণ শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনা, জীবজগতেও তা ঘুরে বেড়ায়। সুযোগ পেলেই তা আবার মানুষে ফিরে আসে আর তখনই আমাদের চেতনা ফেরে। করোনাও তার কথাই আমাদের বলেছে। “কারেন্ট বায়োলজী” পত্রিকায় এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।