ভিটামিন ডি, যা “সানশাইন ভিটামিন” নামে পরিচিত, আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের বিকাশের জন্য অপরিহার্য, বিশেষ করে হাড়ের বৃদ্ধি এবং আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। এই নিবন্ধে গবেষকরা ভিটামিন ডি-এর বিজ্ঞানের, এর গুরুত্ব, এর অভাবের সাথে সম্পর্কিত শারীরিক ঝুঁকি এবং শীতকালে এটি পরিবেশ থেকে লাভ করার ক্ষেত্রে যে বাধা রয়েছে সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। যদিও অনেক ভিটামিনই আমরা আমাদের খাবার থেকে পেয়ে থাকি, ভিটামিন ডি আলাদা কারণ আমাদের শরীর সূর্যের আলো থেকে এই ভিটামিন তৈরি করে। ফলত, শীতকালে, এই প্রয়োজনীয় পুষ্টি পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্জন করা আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
ভিটামিন ডি একটি চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন যা আমাদের অন্ত্রে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ফলস্বরূপ হাড়ের বিকাশ এবং দাঁতের রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করে। তাছাড়াও, এটি ইমিউন সিস্টেমের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রদাহ কমিয়ে বিভিন্ন অটোইমিউন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। ভিটামিন ডি-এর পরিমাণ কম থাকার ফলে দুর্বল হাড়, পেশীতে ব্যথার সাথে সাথে মানুষকে বিষণ্ণ ও মেজাজী করে তোলে। যেহেতু ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এর ঘাটতি অস্টিওপোরোসিস এবং অস্টিওম্যালাসিয়ার মতো অবস্থার কারণ হতে পারে। এছাড়াও, শরীরে এই ভিটামিনের পরিমাণ কম থাকলে হতাশাজনক মনোভাব ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, যা ব্যক্তিদের সংক্রমণের জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে। ভিটামিন ডি এর প্রাথমিক উৎস হল সূর্যালোক। বিশেষত, UVB রশ্মির সংস্পর্শে এলে আমাদের ত্বক ভিটামিন ডি তৈরি করে। শীতকালে, পৃথিবীর অবস্থান পরিবর্তনের ফলে অনেক জায়গায়, বিশেষ করে উচ্চ অক্ষাংশে, দিনেরবেলায় আলো থাকার সময় কমে যায়। সূর্যের আলো কম পরিমাণে পাওয়ার ফলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে না। অন্যদিকে বেশ কয়েকটি খাবার রয়েছে যেগুলো ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ যেমন- স্যামন, ম্যাকেরেল এবং সার্ডিন জাতীয় চর্বিযুক্ত মাছ। এছাড়াও, দুধ, কমলালেবুর রস এবং দানাশস্যে বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে, যা শরীরের পক্ষে উপকারী। আজকাল বাজারে অনেক ধরনের ভিটামিন ডি সম্পূরক পাওয়া যায় কিন্তু এই ধরনের কোনও পরিপূরক শুরু করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেসব অঞ্চলে সূর্যালোক খুবই কম, সেখানে ইউভি ল্যাম্প এবং বাল্ব যা ইউভিবি বিকিরণ নির্গত করে, ভিটামিন ডি সংশ্লেষণের বিকল্প উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও প্রচণ্ড শীতের সময় বহু অঞ্চলে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে, তবে এর গুরুত্ব বুঝে এবং ভিটামিন ডি-র উত্স জানা থাকলে এই বাধা দূর করা যেতে পারে। সূর্যের আলো, নির্দিষ্ট খাবারদাবার বা পরিপূরক খাবার ধারাবাহিকভাবে গ্রহণ করার মাধ্যমে, আমরা ভিটামিন ডি-র অভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারি।