ভারতে বেশিরভাগ প্রজাতির পাখি সংখ্যায় হ্রাস পাচ্ছে – এমনই এক উদ্বেগজনক ইঙ্গিত দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। জীববৈচিত্র্যের এই ক্ষতি এবং পরিবেশের উপর নৃতাত্ত্বিক চাপের কথা প্রকাশিত হয়েছে এক নতুন প্রতিবেদনে। পাখিরা পরিবেশে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যেমন গাছের বীজ পরিবেশে ছড়িয়ে দেওয়া, পরাগায়নে সহায়তা করা, সেইসাথে শিকার করা বা পরিবেশের ময়লা আবর্জনা খেয়ে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা। কিন্তু এই গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রায় ৩০ বছর দীর্ঘ সময় ধরে প্রায় ৬০% পাখির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। গবেষকরা এই ঘটনাকে গভীর উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করছেন। বিগত আট বছরে প্রায় ৪০% পাখির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ১৩টি সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থা মিলে ‘স্টেট অফ ইন্ডিয়াস বার্ডস ২০২৩’-এর রিপোর্টে প্রকাশ করেছে যা ৩ কোটি পাখির উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ১৭৮ টি পাখি চিহ্নিত করা হয়েছে যাদের সংরক্ষণের জন্য জরুরি কর্ম পরিকল্পনা প্রয়োজন এবং তাদের সংখ্যা হ্রাসের কারণ বোঝার জন্য গভীর গবেষণার প্রয়োজন যেমন- সারস, ইন্ডিয়ান কোর্সার, আন্দামান সারপেন্ট ঈগল এবং নীলগিরি লাফিংথ্রাশ (নীলগিরি চিলাপ্পান)। যে সমস্ত পাখিরা বিভিন্ন আঞ্চলিক বাসস্থানের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে, তারা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল, যেমন- প্রিনিয়া, গোলা পায়রা, এশিয়ান কোয়েল এবং ভারতীয় ময়ূর।
সেলিম আলি সেন্টার ফর অর্নিথোলজি অ্যান্ড ন্যাচারাল হিস্ট্রি-র এক সিনিয়র বিজ্ঞানী, রাজা জয়পালের মতে আরও তথ্য, গতবারের চেয়ে আরও বেশি পর্যবেক্ষণ এবং শক্তিশালী পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের পরেও পাখির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এর থেকে এটা স্পষ্ট যে সমস্যা বেশ গুরুতর। ২০২২ সালের স্টেট অফ ওয়ার্ল্ডস বার্ডস রিপোর্ট অনুসারে, সারা বিশ্বে ৪৮% পাখি হ্রাস পেয়েছে, এবং ভারতে পাখির জনসংখ্যার হ্রাস বিশ্বব্যাপী প্রবণতাকেই অনুসরণ করছে। ভারতবর্ষে প্রায় ১৩৫০টি প্রজাতির পাখি দেখা যায় যার মধ্যে ৭৮টি প্রজাতি শুধুমাত্র আমাদের দেশেই পাওয়া যায়। যেসব পাখিরা জীবিত বা মৃত প্রাণী বা পোকামাকড় খায় দেখা গেছে ভারতবর্ষে তাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে। তাই ভাবা হচ্ছে যে এই খাদ্য সম্পদে ক্ষতিকারক দূষণকারী উপাদান রয়েছে বা এদের প্রাপ্যতা হ্রাস পাচ্ছে বা উভয়ই। গবেষকরা দেখেছেন যে যেসমস্ত পাখিরা পোকামাকড় সহ বিভিন্ন অমেরুদণ্ডী প্রাণী খায় সারা বিশ্বে তাদের সংখ্যাও দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। সাম্প্রতিক অনুসন্ধান থেকে জানা যায় যে বিশ্বব্যাপী পোকামাকড়ের জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে আর তাই পাখি ও পোকামাকড়ের সংখ্যা হ্রাস পাওয়া সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করছেন গবেষকরা। তাদের অনুমান কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পোকামাকড় তথা তাদের ভক্ষণকারী পাখিদের সংখ্যা ব্যাপকহারে হ্রাস পাচ্ছে।