আণবিক জীববিজ্ঞানী গোবিন্দস্বামী উমাপ্যাথি এবং তার দল যখন ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরের ১২ টি হ্রদে বিভিন্ন ধরনের আক্রমণাত্মক ক্যাটফিশ বা মাগুর জাতীয় মাছের হদিশ করতে শুরু করেছিল তখন তারা স্বপ্নেও ভাবেননি যে তারা এই মাছের জিনগত উপাদান পরিবেশের প্রায় সমস্ত নমুনায় দেখতে পাবেন। গবেষকের কথায় তারা আফ্রিকান শার্পটুথ ক্যাটফিশের ডিএনএ পরিবেশের বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে পেয়েছেন এমনকি যেখানে এটির অস্তিত্ব তারা একদম আশা করেননি, যেমন শহরের চিড়িয়াখানার ভিতরে একটি পুকুরে সেখানেও এই মাছের ডিএনএ তারা খুঁজে পেয়েছেন।
১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে আফ্রিকান ক্যাটফিশ (ক্ল্যারিয়াস গ্যারিপিনাস) খাদ্য হিসেবে বাংলাদেশ থেকে পূর্ব ভারতে প্রবর্তিত হয়েছিল। এটির প্রজনন এবং আমদানি এখন ভারতের কৃষি মন্ত্রণালয় দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে কারণ এটি জলজ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে। মাগুর জাতীয় এই সহিষ্ণু মাছ দূষিত জলে বেড়ে ওঠে এবং সেখানে বসবাসকারী অন্যান্য মাছেদের খেয়ে নেয়। কিন্তু এদের কম দামের কারণে সারা দেশে গোপনে লালন-পালন করা হয়। এই মাছগুলো প্রায়শই অনিয়ন্ত্রিত জলজ খামার থেকে পালিয়ে গিয়ে কাছাকাছি জলাশয়ে প্রবেশ করে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে এই মাছের ইডিএনএ হায়দ্রাবাদের জলাশয়ের ১২টি নমুনার মধ্যে ১১টিতে উপস্থিতি। গবেষকরা মনে করেন আফ্রিকান ক্যাটফিশের এই ঘটনাটি একটি উদাহরণ মাত্র। অনুপযুক্ত প্রয়োগ, আইনি তদারকির অভাব বা সরকারী সংস্থাগুলির মধ্যে সাযুজ্যতার অভাব, ফলাফল ও কারণ ব্যাখ্যা করে পরিমিত লেখালেখি এবং জনসচেতনতার অভাব ভারতে এই জাতীয় ক্ষতিকারক এলিয়েন প্রজাতি (IAS) বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বর্তমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শুধুমাত্র কয়েকটি সুপরিচিত ক্ষতিকারক প্রজাতি এবং নির্দিষ্ট আবাসস্থলে গুরুত্ব আরোপ করেছে, যেমন সংরক্ষিত এলাকায় বহুবর্ষজীবী ক্ষতিকারক ল্যান্টানা প্রজাতির বিস্তার রোধ করা। আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যের পাশাপাশি অনলাইনে-বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং ভ্রমণ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এয়ারপোর্টে গাছপালা ও প্রাণীজ উপাদান আনা হচ্ছে কিনা তা সেভাবে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে না। বেসরকারী কৃষি ব্যবসা উদ্ভিদের রোগজীবাণু ক্ষেত্রগুলো উপেক্ষা করে বীজ এবং নার্সারি গাছ আমদানি করে। বিশ্বব্যাপী, ৩৭০০০ ক্ষতিকারক এলিয়েন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ মানুষের স্বাস্থ্য, জীববৈচিত্র্য এবং খাদ্য ব্যবস্থাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে প্রতি বছর অর্থনীতিতে ৪২৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করে। এর মধ্যে ৩৫০০ টিরও বেশি আক্রমণাত্মক এলিয়েন প্রজাতি জীববৈচিত্র্য এবং মানুষের জীবিকাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আইপিবিইএস সমীক্ষা অনুযায়ী ১৯৭০ সাল থেকে প্রতি দশকে খরচ চারগুণ বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে ক্ষতিকারক আক্রমণাত্মক প্রজাতিগুলোও দ্রুত নতুন অঞ্চলে প্রসারিত হচ্ছে। ভারতে ক্ষতিকারক আক্রমণাত্মক প্রজাতির প্রভাব বেশিরভাগই স্থল্ভাগের জন্য নথিভুক্ত করা হয়েছে, জলজ আবাসস্থলে নয়, আর তাই আজও তাদের প্রকৃত বিস্তারের মূল্যায়ন সঠিকভাবে করা যায়নি।