আমরা সকলে খাবার খেয়ে বড়ো হই। খাবার আমাদের শক্তির যোগান দেয়। কিন্তু একটু ভাবুন একটি সমগ্র জনসংখ্যা এমন কিছু খাচ্ছে যার পুষ্টিগুণ সামান্য—এমন কিছু যা পুষ্টিহীন, এমন ভিটামিনের অভাব যে ভিটামিন বৃদ্ধিকে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এই ভবিষ্যতের দিকেই আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি, এমন আশঙ্কাই করেছেন কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (ICAR)-এর বিজ্ঞানী সোভন দেবনাথ। ২০২৩ সালের নভেম্বরে, দেবনাথ এবং ICAR, পশ্চিমবঙ্গের বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এবং তেলেঙ্গানার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন -এর বিজ্ঞানীরা এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এই গবেষণা অনুসারে সবুজ বিপ্লব ভারতকে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সাহায্য করেছে, কিন্তু আপস করেছে পুষ্টি নিরাপত্তার সাথে। ভারতের প্রধান দুটি খাদ্যশস্য ধান এবং গমের ক্ষেত্রে পুষ্টির দিক বিবেচনা না করে উচ্চ-ফলনশীল জাতের বিকাশের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। ফলনের দিকে মাথা ঘামানোর ফলে উদ্ভিদের জিনগত গঠনে এতটাই প্রভাব পড়েছে যে তারা আর মাটি থেকে শস্যে পুষ্টি সরবরাহ করার মৌলিক কাজটি করে না। কাটা শস্যের পুষ্টি গুণ যাচাই করে দেখা গেছে যে চাল এবং গম, যা ভারতের মানুষের দৈনিক শক্তির চাহিদার ৫০%-এরও বেশি পূরণ করে, বিগত ৫০ বছরে বা তারও বেশি সময়ে তাদের খাদ্য মূল্যের ৪৫% পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে। বিজ্ঞানীদের অনুমান এই হারে পুষ্টি গুণ হ্রাস পেলে ২০৪০ সালের মধ্যে মানুষের ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠবে। আরও উদ্বেগের বিষয় হল পুষ্টির মাত্রা হ্রাসের পাশাপাশি শস্যে বিষাক্ত উপাদানের ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন বিগত ৫০ বছরে, দস্তা এবং লোহার মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘনত্ব কমে গেছে- চালে যথাক্রমে ৩৩% এবং ২৭% এবং গমে ৩০% এবং ১৯% হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে আর্সেনিকের মতো একটি বিষাক্ত উপাদানের ঘনত্ব চালে ১৪৯৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। খুব সাধারণভাবে বলতে গেলে আমাদের প্রধান খাদ্যশস্যে শুধু কম পুষ্টিগুণ রয়েছে তাই নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।
আমরা জানি যে ফসফরাস (P), ক্যালসিয়াম (Ca), সিলিকন (Si) এবং ভ্যানাডিয়াম (V) এর মতো প্রয়োজনীয় এবং উপকারী পুষ্টি হাড় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; দস্তা (Zn) অনাক্রম্যতা, প্রজনন এবং স্নায়বিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; এবং লোহা (Fe) হিমোগ্লোবিন গঠনের চাবিকাঠি। প্রধান শস্যগুলোতে এই প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবের ফলে স্নায়বিক, প্রজনন এবং পেশি সংক্রান্ত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, বেরিয়াম এবং স্ট্রন্সিয়ামের মতো ধাতব বিষাক্ত পদার্থ খাওয়ার ফলে মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সার বা দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, হাইপারকেরাটোসিস, কিডনির সমস্যা ভোগে এবং হাড়ের গঠনেও এর প্রভাব পড়ে। তারা আরও উল্লেখ করেছেন যে বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টিসমৃদ্ধ ছোটো দানাশস্যের ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতির কারণে ভারতীয়রা এক বিপজ্জনক পুষ্টির সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।