মানুষের বয়স বাড়তে থাকে, আর তার জীবনের প্রতি ভালোবাসা বাড়তে থাকে। মানুষ বার্ধক্য এড়াতে নানা জিনিসের সাহায্য নিতে থাকে, ডায়েট, প্রসাধনী, আনুষাঙ্গিক খাদ্যবস্তু যার ভিত্তিতে কোটি কোটি টাকার ব্যাবসায়িক লেনদেন পৃথিবী জুড়ে চলতে থাকে। আমরা যদি বিংশ শতাব্দীর দিকে দেখি, আর বর্তমান সময়ে ফিরি, তবে দেখব বিশ্বের সব দেশে মানুষের আয়ুষ্কাল আগের তুলনায় প্রায় ৩০/৪০ বছর বেড়ে গেছে। এর পিছনে মূলত চিকিৎসার উন্নতি, উন্নত জীবনযাত্রার অবদান রয়েছে। আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির সাথে ক্রনিক এবং ডিজেনারেটিভ রোগের সম্ভাবনা বাড়ছে, যার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে হৃদরোগ। ফলে মানুষ এখন বেশিদিন কীভাবে সুস্থ শরীরে বাঁচবে তা মূল চ্যালেঞ্জ।
বিশ্বজুড়ে কিছু নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে যেখানে শতবর্ষীয় ব্যক্তিদের অনুপাত উচ্চ, তারা অসাধারণ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী। ইতালির AKEA সমীক্ষায় সার্ডিনিয়া এরকম একটা অঞ্চল, যেখানে বসবাসকারী স্থানীয়দের বেশি সংখ্যক মানুষ ১০০ তম জন্মদিন পালন করতে পেরেছেন। এই অঞ্চল ‘ব্লু জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই দীর্ঘায়ু অঞ্চল প্রসারিত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেখানে বেশি সংখ্যক দীর্ঘজীবী, সুস্থ মানুষ রয়েছেন। এই স্বীকৃত অঞ্চল হল ইকারিয়া, গ্রীস; ওকিনাওয়া, জাপান; নিকোয়া, কোস্টারিকা; এবং লোমা লিন্ডা, ক্যালিফোর্নিয়া৷ দীর্ঘ জীবনকাল ছাড়াও, এই অঞ্চলগুলিতে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে কিছু সাধারণ বিষয় থাকে – একটি সম্প্রদায়ের অংশ হয়ে ওঠা; জীবনধারণের জন্য কিছু উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া; পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া; উদ্বেগের মাত্রা কম হওয়া এবং দৈনিক ব্যায়াম বা শারীরিক কাজ করা। হয়তো তাদের পরিবেশের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে, বেশিরভাগই গ্রামীণ বা কম দূষিত এলাকায় থাকেন আবার কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দীর্ঘায়ু জিন থাকে। তবে দেখা গেছে আয়ুর ক্ষেত্রে জিনের প্রভাব মাত্র ২০-২৫%।
যদি এই অঞ্চলের ব্যক্তিদের খাদ্যাভ্যাস দেখি তবে একধরনের মিল দেখা যায়, এদের খাদ্যে আঞ্চলিক সবজি ও ফলের আধিক্য দেখা যায়। কোনো কোনো এলাকায় মাঝারি মাপে মাছ, মাংস খাওয়া হয়, চা-র মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও তারা গ্রহণ করেন, তবে সব জায়গাতেই ঘরে তৈরি রান্না খাওয়া হয়। মূলত উদ্ভিদ-ভিত্তিক, প্রাকৃতিক সম্পূর্ণ খাবার – হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়। অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমকে সমর্থন করতে পারে, যা স্বাস্থ্যকর বার্ধক্যের সাথে জড়িত। ফলে শতবর্ষীয় ব্যক্তিরা খাদ্যের বিভিন্ন পুষ্টির প্রতিরক্ষামূলক প্রভাবের সংমিশ্রণে দীর্ঘায়ু হয়ে থাকেন।
আমাদের ক্রোমোজোমের শেষ অংশ হল টেলোমিয়ারস যা আমাদের জেনেটিক উপাদান রক্ষা করে। প্রতিবার কোশ বিভাজিত হলে আমাদের টেলোমিয়ারস ছোটো হতে থাকে, তাই বয়স বাড়ার সাথে সাথে টেলোমিয়ারস ধীরে ধীরে ছোটো হয়ে যায়। কিছু জীবনযাত্রা প্রণালী যেমন ধূমপান এবং বাজে খাদ্যাভ্যাস টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্য কমাতে পারে। মনে করা হয় টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্য বার্ধক্যের একটি বায়োমার্কার। তাই লম্বা টেলোমিয়ার থাকলে তা আংশিকভাবে দীর্ঘায়ুর সাথে যুক্ত হতে পারে। দীর্ঘায়ু হওয়ার বৃহত্তর চিত্রের মধ্যে ডায়েট এমন একটি অংশ, যা আমাদের নিজের হাতে আছে। এটি কেবল আমাদের স্বাস্থ্যের গুণমানই নয়, আমাদের বয়সের মানকেও উন্নত করতে পারে।