সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকর্মা পুজোর পর প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় নিরঞ্জন সংক্রান্ত যাবতীয় বিধিনিষেধ যে কিভাবে লঙ্ঘিত হল তা আমরা সকলেই লক্ষ্য করেছি এবং এ থেকে একটা জিনিষ পরিষ্কার যে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য এমন একটা জরুরি বিষয়ে বিন্দুমাত্র প্রশাসনিক তৎপরতা বা সদিচ্ছা থাকলে এমনটা ঘটতে পারতো না ।
প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে West Bengal Prevention & Control of Water Pollution (Procedure for Immersion of Idols after Pujas) Rules, 2018 সেই অংশটির যেখানে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যদি কোন পুজোকমিটি কর্তৃক এই বিধিনিষেধগুলি লঙ্ঘিত হয়, তাহলে দোষী কমিটিগুলিকে নিয়মানুযায়ী আর্থিক দন্ড দিতে হবে । এই আইন অনুসারে, পঞ্চায়েত, পৌরসভা এবং পৌরনিগম অঞ্চলে অবস্থিত পুজোকমিটির ক্ষেত্রে এই আর্থিক দন্ড বা ফাইনের পরিমাণ হবে যথাক্রমে তিন, পাঁচ বা সাত হাজার টাকা ।
বিশ্বকর্মা পুজোর পর এই আইন যে সকল কমিটি লঙ্ঘন করেছেন তাঁদের কারোর উপরেই এমন কোন ফাইন লাগু হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই । অতএব এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, যে প্রশাসনিক স্তর বা দপ্তরের উপর এই আইন বলবৎ করার দায় বর্তায়, তাঁরা কি করছিলেন বা করছেন। উক্ত আইন অনুসারেই এই দায়িত্ব যৌথভাবে স্থানীয় সরকার, পুলিশ প্রশাসন এবং পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উপর ন্যস্ত । তাই এই দায় অস্বীকার করতে পারেন না এঁদের কেউই ।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং National Mission for Clean Ganga এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করেছেন । সেই মোতাবেক, বিষয়টি সম্পর্কে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য সরকারের পরিবেশ দপ্তরও তাঁদের দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না । বিশ্বকর্মা পুজোর পরবর্তী ঘটনাবলী আমাদের কাছে অশনিসংকেতের মতো কাজ করছে । শুরু হয়ে গেছে উৎসবের ঋতু । আর মাত্র কয়েকদিন পরেই শুরু হয়ে যাবে পশ্চিমবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসব দূর্গাপুজো । এরপর সরস্বতীপুজো পর্যন্ত দীর্ঘ চারমাস ধরে এক এক করে আসতে থাকবে লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, ছটপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো, কার্তিক পুজো, রাসযাত্রা ।
এই অবস্থায় কালবিলম্ব না করে রাজ্য সরকারের পরিবেশ দপ্তর সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, পুলিশ প্রশাসন এবং সর্বস্তরের স্থানীয় প্রসাশনকে সদর্থক উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে । লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কোনস্থানে কোনভাবেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কোন বিধিনিষেধ লঙ্ঘিত না হয়, যাতে পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক সকল নির্দেশিকা পালিত হয় অক্ষরে অক্ষরে । যেখানেই কোনোরকমের বেনিয়ম দেখা যাবে সেখানেই কঠোর থেকে কঠোরতম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে কোনোরকম গড়িমসি করা চলবে না ।
অত্যন্ত দুঃখ এবং দুর্ভাগ্যের বিষয় হোল যে এই আইনগুলি দীর্ঘদিন ধরে বলবৎ থাকার পরও তাদের প্রতি সামান্যতম মান্যতা দিতে দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কাউকেই । অধুনা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পুজোকমিটিকে অনুদান দেবার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে । রাজ্য সরকারের থেকে অনুদান গ্রহণ করার পরও এমন গুরুত্বপূর্ণ আইন ও নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখানোর এই প্রথা চলতে দেওয়া যায় না । অবিলম্বে এমন নিয়ম চালু হওয়া দরকার, যে সকল পুজো কমিটি দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত এই সমস্ত আইন লঙ্ঘন করবেন, তাঁদের অনুদান প্রদান বন্ধ হয়ে যাবে । এছাড়াও, আইনলঙ্ঘনকারী প্রতিটি পুজো কমিটির কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও পরিবেশধ্বংস বিষয়ক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক বলে আমরা মনে করছি । যাঁরা অনুদান পেয়েছেন বা পাননি এমন কারোরই বছরের পর বছর ধরে এই ধরণের ভয়ংকর গণদূষণ ঘটিয়ে চলা কোনোরকম ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ।
আমরা ইতিপূর্বেও বারংবার সকল ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনকে অনুরোধ জানিয়েছি এই বিষয়ে ব্যাপক প্রচার অভিযান চালাতে । বলেছি যেখানে যেখানে এমন আইন লঙ্ঘনের ঘটনা তাঁদের চোখে পড়বে তাঁরা যেন কালক্ষেপ না করে সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি সেখানকার স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনেন এবং লক্ষ্য রাখেন প্রশাসনের তরফে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে কি না । আমরা আবারও সকল সংবেদনশীল ব্যক্তি এবং সংস্থার কাছে সেই একই অনুরোধ রাখছি । মনে রাখতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কিন্তু আমরা দায়বদ্ধ ।