অ্যালকালয়েড বা ক্ষারীয় যৌগ- যেমন ক্যাফিন; কফি, চা এবং চকোলেটকে খেতে সুস্বাদু এবং মনোরম করে তোলে তবে প্রচুর পরিমাণে এই যৌগ খেলে তা ক্ষতিকারক হতে পারে। মানুষের শরীরে যকৃত পরিমিত পরিমাণে এই যৌগ নিরাপদে বিপাক করতে পারে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষাক্ত গুটিযুক্ত ব্যাঙ তাদের খাবারের মাধ্যমে অনেক বেশি বিষাক্ত অ্যালকালয়েড গ্রহণ করে, কিন্তু এই বিষাক্ত পদার্থ ভেঙে ফেলার পরিবর্তে, শিকারীদের থেকে বাঁচতে তারা এই যৌগগুলো তাদের ত্বকে জমা করে। ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক অরোরা আলভারেজ-বুয়েলার মতে এই বিষাক্ত গুটিওয়ালা ব্যাঙ কীভাবে নিজেদের শরীরে বিষক্রিয়া না ঘটিয়ে তাদের শরীরের মধ্যে এই অ্যালকালয়েড বহন করে চলে তা দীর্ঘদিন ধরে রহস্যাবৃত। তাই গবেষকরা চেষ্টা করেন ব্যাঙের রক্তে এমন প্রোটিনের সন্ধান করতে যা ক্ষারীয় যৌগগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে তা নিরাপদে পরিবহন করতে পারে।
আলভারেজ-বুয়েলা এবং তার সহকর্মীরা বিষাক্ত ব্যাঙ ডায়াবলিটোর থেকে নেওয়া রক্তের নমুনায় ওই নির্দিষ্ট প্রোটিনকে আকর্ষণ করতে এবং বাঁধতে এক ধরনের “আণবিক ফিশিং হুক” হিসাবে বিষ ব্যাঙের অ্যালকালয়েডের মতো একটি যৌগ ব্যবহার করেছিলেন। অ্যালকালয়েড-সদৃশ যৌগটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যাতে পর্যবেক্ষণের সময় সেগুলো ফ্লুরোসেন্ট আলোতে জ্বলজ্বল করে। এরপরে, গবেষকরা প্রোটিনগুলো আলাদা করে দেখেন যে কীভাবে প্রতিটি একটি দ্রবণে অ্যালকালয়েডের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে। তারা দেখেন যে অ্যালকালয়েড বাইন্ডিং গ্লোবুলিন (ABG) নামক একটি প্রোটিন একটি ‘টক্সিন স্পঞ্জ’-এর মতো কাজ করে ক্ষারীয় যৌগ সংগ্রহ করে। তারা শনাক্ত করেন কীভাবে প্রোটিন এই ক্ষারীয় যৌগের সাথে আবদ্ধ হয়। আলভারেজ-বুয়েলা ব্যাখ্যা করেন ABG যেভাবে অ্যালকালয়েডগুলোর সাথে যুক্ত হয় একইভাবে মানুষের রক্তে হরমোন পরিবহনকারী প্রোটিনগুলো তাদের লক্ষ্যের সাথে সংযুক্ত হয়। এই আবিষ্কারটি থেকে এটা স্পষ্ট যে ব্যাঙের হরমোন নিয়ন্ত্রণকারী প্রোটিন অ্যালকালয়েড টক্সিন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তৈরি করেছে। সম্ভাব্য চিকিৎসা প্রাসঙ্গিকতার ছাড়াও গবেষকদের বিষাক্ত ব্যাঙের জৈববিজ্ঞান সম্বন্ধে ধারণা গঠন হয়েছে, যা জীববৈচিত্র্য এবং প্রকৃতিতে রাসায়নিক প্রতিরক্ষার বিবর্তনের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।