সমুদ্রের ঢেউয়ের ওঠা পড়ার সাথে সাথে সমুদ্রের তলদেশে এই ঢেউ শক্তি প্রয়োগ করে এবং সিসমিক তরঙ্গ তৈরি করে। এই সিসমিক তরঙ্গগুলো এত শক্তিশালী এবং বিস্তৃত যে তারা সিসমোগ্রাফে একটি অপরিবর্তনীয় চিত্র তৈরি করে। এই সিসমোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যেই ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ করা যায়। সাম্প্রতিককালে এই তরঙ্গ সংকেত আরও তীব্র হয়ে উঠছে, ক্রমাগত সমুদ্রের ঝড় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সমুদ্রের ঢেউ আরও স্ফীত হচ্ছে। নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে একটি নতুন গবেষণায়, বিগত চার দশকে বিশ্বজুড়ে এই বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এই তথ্য এবং বিভিন্ন মহাসাগর, উপগ্রহ এবং আঞ্চলিক ভূমিকম্প সংক্রান্ত গবেষণায় দেখা গেছে যে সমুদ্রের তরঙ্গ শক্তি ও ঝড় এক দশক ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে আর এর জন্য দায়ী বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি।
গ্লোবাল সিসমোগ্রাফিক নেটওয়ার্ক ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ এবং অধ্যয়নের জন্য বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করে থাকেন। এই সংবেদনশীল যন্ত্র ক্রমাগত প্রাকৃতিক এবং মানব সৃষ্ট ভূমিকম্পের একটি বিশাল বৈচিত্র্য রেকর্ড করে, যার মধ্যে রয়েছে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, পারমাণবিক এবং অন্যান্য বিস্ফোরণ, উল্কার আঘাত, ভূমিধস এবং হিমবাহ-ভূমিকম্প। যন্ত্রগুলো বায়ু, জল এবং মানুষের কার্যকলাপ থেকে অবিরাম সিসমিক সংকেত গ্রহণ করে। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে “মাইক্রোসিজম” শব্দটি ভূমির কম বা বেশি মাত্রায় কম্পন বোঝায় যা ভূমিকম্প বা বিস্ফোরণ দ্বারা উত্পাদিত হয় না। সমুদ্রের বিপুল জলরাশি যখন ঝড়ের কারণে প্রচণ্ড বেগ বা আকার ধারণ করে এবং বিভিন্ন দিকে ধাবিত হয় আর বালির উপর আছড়ে পড়ে তখন এই সমুদ্রের তলদেশের কম্পনকে মাইক্রোসিজম বলে। গবেষণা থেকে জানা গেছে যে বিশ শতকের শেষের দিক থেকে বিশ্বব্যাপী গড় সমুদ্র তরঙ্গ শক্তি প্রতি বছর ০.২৭% গড় হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর, ২০০০ সাল থেকে, বিশ্বব্যাপী গড় বৃদ্ধির হার প্রতি বছর ০.৩৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে মানব ক্রিয়াকলাপ থেকে ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের সাথে যুক্ত অতিরিক্ত তাপের প্রায় ৯০% মহাসাগরগুলো শোষণ করেছে। এই অতিরিক্ত শক্তি আরও ক্ষতিকারক তরঙ্গ এবং আরও শক্তিশালী ঝড়ে পরিণত হতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর ক্ষেত্রে সমুদ্রের তরঙ্গের উচ্চতা বৃদ্ধি উপকূলরেখাকে আঘাত করতে পারে, অবকাঠামোর ক্ষতি করতে পারে এবং জমি ক্ষয় করতে পারে। ক্রমবর্ধমান তরঙ্গ শক্তির প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সমস্যা আরও জটিল করে তুলছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ সুরক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করার দিকে গবেষণা নির্দেশ দিচ্ছে।