সমুদ্রের মাঝে বা কোনও দ্বীপের আশেপাশে দৈত্যাকার রন্ধ্রকে বলে ব্লু হোল। সমুদ্রের স্বাভাবিক গভীরতার চেয়ে এই ব্লু হোলগুলোর গভীরতা অনেক বেশি। বিশাল গর্তের আকারের এই সব ব্লু হোলের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সূর্যালোক পৌঁছয় না। ফলে এর গর্ভ অন্ধকারে নিমোজ্জিত থাকে এবং তার ভিতরের জলকে দেখে মনে হয় অনেক বেশি গাঢ় নীল। আকাশ থেকে সমুদ্রে চোখ রাখলেও আলাদা করে ব্লু হোলের অস্তিত্ব বোঝা যায়, কারণ ওই সামুদ্রিক রন্ধ্রের উপরের জলভাগকে, আশপাশের জলভাগের চেয়ে বেশি নীল দেখায়। সেই কারণেই এই সামুদ্রিক রন্ধ্রগুলোর নাম ব্লু হোল। সম্প্রতি ফ্রন্টিয়ার্স ইন মেরিন সায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণায় মেক্সিকোর চেতুমাল উপসাগরে অবস্থিত তাম জা’ ব্লু হোলের বিস্ময়কর গভীরতার কথা বলা হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের একটি ডাইভিং অভিযানে এর নতুন পরিমাপ প্রকাশিত হয়েছে। ১৩৮০ ফুট গভীর এই ব্লু হোল ইঙ্গিত দেয় এই অতল গহ্বরে অনাবিষ্কৃত সামুদ্রিক জীবনের যা আমাদের অনুসন্ধানের অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে গবেষকরা মনে করতেন বিশ্বের ‘গভীরতম’ সামুদ্রিক রন্ধ্র দক্ষিণ চিন সাগরে অবস্থিত। চিনের এই সুগভীর ব্লু হোল যা ‘ড্রাগন হোল’ নামে পরিচিত তার গভীরতা ৪৮০ ফুট। ব্লু হোলটির অবস্থান বিতর্কিত প্যারাসেল আইল্যান্ডসের মাঝখানে। গবেষকদের মতে এইসব গভীর ব্লু হোলে অনুসন্ধান চালানো বেশ চ্যালেঞ্জিং। এই সামুদ্রিক গর্তে অক্সিজেনের অনুপস্থিতি এবং বিপজ্জনক হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের উপস্থিতির কারণে এই স্থানে অনুসন্ধান চালানোর জন্য বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন। ফলত আজও ব্লু হোল রহস্যে আবৃত।
২০২১ সালে আবিষ্কৃত হওয়া সত্ত্বেও, ইকো-সাউন্ডার ব্যবহার করে প্রাথমিকভাবে তাম জা’ ব্লু হোলের মাত্র ৯০০ ফুট গভীরে পৌঁছানো গিয়েছিল। পরবর্তী ক্ষেত্রে উন্নত সরঞ্জামের সাহায্যে ডাইভিং অভিযান পরিচালনা করা হয় যেখানে একটি অত্যাধুনিক CTD (পরিবাহিতা, তাপমাত্রা এবং গভীরতা) প্রোফাইলার ব্যবহার করা হয়েছে। এই অত্যাধুনিক ডিভাইস, একটি ১৬৪০-ফুট তারের সাথে সংযুক্ত, এবং ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন তথ্য প্রেরণ করে। তবে এই অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়েও, গবেষকরা ব্লু হোলের তলদেশ অবধি পৌঁছাতে পারেননি। তারটি ১৩৮০ ফুট যাওয়ার পর গভীরে শক্তিশালী স্রোতের সম্মুখীন হয়েছে। গবেষকদের অনুমান তলদেশে গুহা এবং তার সঙ্গে সংযুক্ত কিছু সুড়ঙ্গ পথ রয়েছে যেখানে মিশমিশে কালো অন্ধকারে বসবাস করে অদেখা অজানা এক জগত, সেখানকার নানা রহস্য আজ উন্মোচনের অপেক্ষায় রয়েছে।