তলপেটের ব্যথা, বারবার বাথরুমে দৌড়ানো, জ্বালা ও ব্যথার সঙ্গে শীত শীত ভাব আর কাঁপুনি— এ সবই হল প্রস্রাবের সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গ। শারীরিক গঠনের কারণে মেয়েদের প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। প্রতি পাঁচ জন পূর্ণ বয়সি মহিলার মধ্যে এক জন মূত্রনালীর সংক্রমণে কষ্ট পান। নারী, পুরুষ, শিশু মিলিয়ে বিশ্বের প্রায় ১৫ কোটি মানুষ প্রতি বছর প্রস্রাবের সংক্রমণে ভোগেন। মূত্রথলি বা ইউরিনারি ব্লাডার থেকে ইউরেথ্রা বা মূত্রনালী নামক একটা সরু নলের মতো সূক্ষ্ম নালী দিয়ে প্রস্রাব শরীরের বাইরে আসে। মেয়েদের ক্ষেত্রে ইউরেথ্রা মাত্র তিন থেকে চার সেন্টিমিটার লম্বা। আর মলদ্বারের সংলগ্ন থাকায় চট করে ব্যাক্টেরিয়া ইউরেথ্রা দিয়ে সোজা ব্লাডারে পৌঁছে যায় আর সংক্রমণ ঘটায়। অর্ধেকেরও বেশি মহিলার জীবনে মূত্রনালী সংক্রমণ ঘটে থাকে, এবং প্রায় এক চতুর্থাংশ সংক্রমণ ছয় মাসের মধ্যে ফিরে আসে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের নিউরোলজিক্যাল ইউরোলজিস্ট মার্কাস ড্রেক বলেছেন, এই সংক্রমণের ব্যথার চিকিৎসা করা বেশ কঠিন। অনেক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার সত্ত্বেও ব্যথা ফিরে ফিরে আসে। এই ব্যথা নিয়েই সম্প্রতিকালে গবেষণা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে যে সংক্রমণের প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে স্নায়ুর বৃদ্ধি এর জন্য দায়ী হতে পারে। গবেষকরা জানতেন যখন মূত্রনালীর সংক্রামিত হয়, তখন মূত্রাশয়ের প্রথম প্রতিরক্ষার মধ্যে একটি হল ব্যাকটেরিয়া অপসারণের জন্য একটি কলার স্তর ঝেড়ে ফেলা। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায়, স্নায়ুগুলো বন্ধ হয়ে যায়, যা স্নায়ু-বর্ধমান প্রতিরোধক কোশকে সক্রিয় করে তোলে। গবেষকদের মতে বারবার মূত্রনালী সংক্রমণ ঘটার ফলে ইঁদুরের মূত্রাশয়ের কলায় দুধরনের ইমিউন কোশের প্রাচুর্য লক্ষ করা যায়। মাস্ট কোশ নামক একধরনের ইমিউন কোশ অনেক বেশি পরিমাণে মূত্রাশয়ের কলায় উপস্থিত থাকে এবং নার্ভ গ্রোথ ফ্যাক্টর নামে একটি পদার্থ তৈরি করে। এছাড়াও রক্ত-ভিত্তিক ইমিউন কোশ মনোসাইট সংক্রমণের জায়গায় পৌঁছে আরও বেশি করে নার্ভ গ্রোথ ফ্যাক্টর তৈরি করতে থাকে। নার্ভ গ্রোথ ফ্যাক্টর শুধুমাত্র স্নায়ুর বৃদ্ধি ঘটায় না; এটি স্নায়ুর ব্যথা এবং চাপের রিসেপ্টর যে মাত্রায় সক্রিয় হয় সেই থ্রেশহোল্ডকেও কমিয়ে দেয়। বর্তমানে মানুষের ক্ষেত্রে মূত্রনালীর সংক্রমণ জনিত ক্রমাগত ব্যথা সাধারণত অ্যান্টিহিস্টামাইন সহ অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বা অন্যান্য ব্যথা-হ্রাসকারী ওষুধ দিয়ে চিকিত্সা করা হয়, তবে গবেষকরা এই বিষয়ে সন্তুষ্ট নন তারা আশা করেন যে বারবার সংক্রমণের সাথে কীভাবে স্নায়ু বৃদ্ধি পায় তা বোঝা ভবিষ্যতে আরও কার্যকর ব্যথা উপশম চিকিত্সার দিকে নিয়ে যেতে পারে।