বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে গ্রহের অভ্যন্তরে সর্বদা বেশ কিছু অদ্ভুত জিনিস ঘটে যায়, সেখানে পরিচিত পদার্থগুলো চরম চাপ এবং তাপ উভয়ের শিকার হয়। সম্ভবত পৃথিবীর কঠিন অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রীয়স্থলে লৌহ পরমাণু নৃত্যের ছন্দে চলাচল করে, এবং গরম, কালো, ভারী বরফ – যা একই সময়ে কঠিন এবং তরল উভয় রূপেই উপস্থিত- সম্ভবত ইউরেনাস এবং নেপচুনের মধ্যে তৈরি হয়। পাঁচ বছর আগে, বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে এই অদ্ভুত বরফকে পুনরায় তৈরি করেছিলেন, নামকরণ করেছিলেন সুপারায়নিক বরফ, এবং চার বছর আগে তারা এর অস্তিত্ব এবং স্ফটিকের মতো গঠন নিশ্চিত করেছেন। তারপরে গত বছর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর সেন্টার ল্যাবরেটরি (SLAC) সুপারায়নিক বরফের একটি নতুন রূপ আবিষ্কার করেছেন। তাদের আবিষ্কার থেকে জানা যায় ইউরেনাস এবং নেপচুনের একাধিক মেরু সহ এমন চৌম্বক ক্ষেত্রের অস্তিত্বের কারণ।
আমরা আমাদের পার্থিব চারপাশ থেকে, ভাবি যে জল একটি সরল, কনুই-আকৃতির অণু যা দুটি হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত একটি অক্সিজেন পরমাণু দ্বারা গঠিত এবং জল জমে গেলে সেটি একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে স্থির হয়ে থাকে। সুপারায়নিক বরফ অদ্ভুতভাবে ভিন্ন, অনুমান করা হয় যে শুধুমাত্র ইউরেনাস, নেপচুনের অভ্যন্তরই নয়, একই রকম এক্সোপ্ল্যানেটও এর অস্তিত্ব রয়েছে। এই গ্রহগুলোতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ২ মিলিয়ন গুণ বেশি চাপ রয়েছে এবং গ্রহের অভ্যন্তরের তাপমাত্রা সূর্যের পৃষ্ঠের মতোই গরম – হয়তো তাই জলের রূপ এখানে অদ্ভুত। বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেন যে সুপারায়নিক বরফের অক্সিজেন পরমাণুগুলো একটি কঠিন ঘনকাকৃতির জালিতে আটকে থাকে, আর আয়নিত হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো আলগা থাকে ও সেই জালির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি সুপারায়নিক বরফকে তার পরিবাহী বৈশিষ্ট্য দেয়। এটি তার গলনাঙ্কও বৃদ্ধি করে যাতে হিমায়িত জল উচ্চ তাপমাত্রাতে শক্ত থাকে। এক্স-রে ডিফ্র্যাকশনের মাধ্যমে উষ্ণ, ঘন বরফের স্ফটিক আকারের গঠন প্রকাশিত হয়। এই পদ্ধতি নিশ্চিত করেছে যে বরফের স্ফটিক আকার আসলে ২০১৯ সালে পর্যবেক্ষণ করা সুপারায়নিক বরফ থেকে আলাদা একটি নতুন রূপ। নতুন আবিষ্কৃত সুপারায়নিক বরফ, আইস XIX-র একটি দেহ-কেন্দ্রিক ঘন কাঠামো রয়েছে এবং ২০১৯ সালের পূর্বসূরি বরফ XVIII-এর তুলনায় এর পরিবাহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে পরিবাহিতা গুরুত্বপূর্ণ কারণ চলমান চার্জযুক্ত কণা চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। এটি ডায়নামো তত্ত্বের ভিত্তি, যা ব্যাখ্যা করে কীভাবে পরিবাহী তরল, যেমন পৃথিবীর গুরুমণ্ডল বা অন্য কোন মহাকাশীয় বস্তুর অভ্যন্তরে, চৌম্বক ক্ষেত্রের জন্ম দেয়। নেপচুনের ক্ষেত্রে তার অভ্যন্তরীণ গঠন উত্পাদিত চৌম্বক ক্ষেত্রের ধরণকে পরিবর্তন করে।