একটা শিম্পাঞ্জির বাচ্চা তার পরিবারের একজন প্রাপ্তবয়স্কের পিঠে থাপ্পড় মারে, তারপর সেই শিম্পাঞ্জির কী প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য ফিরে তাকায় আর দৌড়ে পালাতে যায়। ওমা কিছুই তো করল না! তাই বাচ্চা শিম্পাঞ্জি ফিরে এসে আবার আরেকটা থাপ্পড় মারল। এই সময় বড়ো শিম্পাঞ্জি বাচ্চাটাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়, কিন্তু বেশিক্ষণ বাচ্চাটা সরে থাকার পাত্র নয়। মানুষের ক্ষেত্রে ঠিক যেমন দেখা যায়, এটাও যেন ওরকম! জার্মানির লাইপজিগ চিড়িয়াখানায় রেকর্ড করা এই দৃশ্য থেকে বোঝা যায় বনমানুষরা মানব শিশুদের মতোই একভাবে খেলাধুলা করে বড়োদের উত্যক্ত করে। দেখা গেছে এরা নিজেদের মধ্যে আরও নানারকম ঠাট্টা করে। কেউ হয়তো একজনকে একটা জিনিস দিচ্ছে, দ্বিতীয়জন যখন নিতে যাবে, শেষ মুহূর্তে প্রথমজন জিনিসটা সরিয়ে নিল। অন্যান্যরা যা করতে বলা হয় তার বিপরীত কাজ করছিল। কেউ কেউ শুধু খোঁচা দিতে পছন্দ করত। এই আচরণের বেশিরভাগই মানব শিশুদের মধ্যে সাধারণ, প্রায় আট মাস থেকে শুরু করে মোটামুটি বেশ বড়ো বয়স পর্যন্ত চলে। রয়্যাল সোসাইটি বি জার্নালে প্রসিডিংসের অধ্যয়ন অনুসারে, স্বাভাবিক খেলা এবং আগ্রাসনের মধ্যে কোথাও, কৌতুকপূর্ণ ঠাট্টার সাথে অন্যদের প্রতিক্রিয়ার প্রত্যাশা করা এবং তাদের হতভম্ব করার উপভোগ জড়িত। এর থেকে কিন্তু কোন গণ্ডগোল মারামারির সূত্রপাত হয়না। বাচ্চা শিম্পাঞ্জিরা বিরক্ত করলে বড়ো শিম্পাঞ্জিরা সেগুলো শান্তভাবে উপভোগ করে।
বনমানুষদের চার ধরনের প্রজাতির মধ্যেই এই ঠাট্টা ইয়ার্কি দেখা যায়। “কৌতুক করার জন্য জ্ঞানীয় পূর্বশর্ত” সম্ভবত লক্ষ লক্ষ বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষের মধ্যে দেখা গিয়েছিল। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসের গবেষকরা চিড়িয়াখানায় শিম্পাঞ্জি, বোনোবোস, গরিলা এবং ওরাংওটাং-দের ৭৫ ঘন্টার ভিডিও বিশ্লেষণ করেছেন। প্রতিটি প্রজাতির একজন বাচ্চার উপর ফোকাস করে, গবেষকরা ১৮ টা ভিন্ন টিজিং আচরণ চিহ্নিত করেছেন। তারা দেখেছেন শিম্পাঞ্জিরা সবচেয়ে বেশি মজা করে। ওরাংওটাং-রা চুল টানতে পছন্দ করে, গোরিলারা ধাক্কাধাক্কি করে। বাচ্চারা খেলাধুলোও করে কিন্তু এরকম মজাও করে। এই ধরনের কৌতুক করার বৌদ্ধিক ক্ষমতা ১৩ মিলিয়ন বছর আগে মানুষের এবং সমস্ত আধুনিক প্রাইমেটের সাধারণ পূর্বপুরুষের মধ্যে উপস্থিত ছিল। কিন্তু এরকম মজার পেছনে কি কারণ? মানব শিশুদের ক্ষেত্রে এই ধরনের তামাশা “সামাজিক সীমানা পরীক্ষা করতে” সাহায্য করে, পরস্পরকে আনন্দ দেয়, এবং রসিকতার মাধ্যমে তাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করে তোলে।