জলজ এবং সমুদ্রের প্রাণীদের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করেছি যে প্রাণীদের দেহে প্লাস্টিক জড়িয়ে রয়েছে। প্লাস্টিকের জালে আবদ্ধ পিঁপড়ে থেকে আজ এটা স্পষ্ট যে মানবজাতির ক্ষতিকারক পলিমার দূষণ পূর্বের ধারণার চেয়ে আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়েছে এবং বন্যপ্রাণীকে প্রভাবিত করছে। ইকোলজিক্যাল এনটোমোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় এই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। লা পালমা আগ্নেয়গিরির দ্বীপ থেকে সংগ্রহ করা ১১৩ টি পিঁপড়ে পর্যবেক্ষণ করার সময় বিজ্ঞানীরা কিছু তারের জটে আবদ্ধ পোকামাকড় নজর করেছেন যার মধ্যে একটি ছিল লাসিয়াস গ্র্যান্ডিস পিঁপড়ে যা পাতলা, লাল ফাইবারে ফাঁদে আটকে পড়েছিল, আর একটি মনোমোরিয়াম পিঁপড়ে যা একটি কালো ফাইবারে মোড়ানো ছিল। পিঁপড়ের দেহ এবং পায়ের চারপাশে জড়ানো ফাইবারগুলোর রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে সেগুলো প্লাস্টিকের তৈরি। প্লাস্টিক বর্জ্য সামুদ্রিক পাখি এবং সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকারক, কিন্তু এটি স্থলে বসবাসকারী প্রাণীদের ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, উটের পাকস্থলীতে জড়িয়ে যায় বা পাখিদের গায়ে আটকে তাদের মৃত্যুর কারণ হয়। বিজ্ঞানীরা কিছু পোকামাকড়ের গায়ে প্লাস্টিক জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত করেছেন। সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোটক্সিকোলজিস্ট বেথানি কার্নি অ্যালমরোথ বলেছেন, জলজ ক্যাডিসফ্লাই লার্ভা তাদের প্রতিরক্ষামূলক শরীরের আবরণ তৈরি করতে ছোটো প্লাস্টিকের টুকরো ব্যবহার করতে পারে। যদিও পিঁপড়ে এবং স্থল্ভূমির অন্যান্য ছোটো ছোটো পোকামাকড়ের গায়ে প্লাস্টিক জড়িয়ে থাকার প্রমাণ আগে পাওয়া যায়নি। তবে মাদ্রিদের ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ আলভারো লুনারের মতে বিগত ১৫ বছরে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র সম্বন্ধে অনেক গবেষণা হয়েছে কিন্তু বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গির জন্য অন্যান্য বাস্তুতন্ত্র এবং প্রজাতিতে গবেষণা প্রসারিত করতে হবে। গবেষকদের অনুমান সংলগ্ন রাস্তা এবং হাইকিং ট্রেইলগুলো ফাইবারের উত্স হিসাবে কাজ করতে পারে, এবং প্লাস্টিক কণাকে বাতাসের মাধ্যমে দীর্ঘ দূরত্বে নিয়ে যেতে পারে। সামুদ্রিক পরিবেশবিদ মেলানি বার্গম্যানের মতে সম্ভবত অনেক আগে থেকেই পোকামাকড়ের গায়ে প্লাস্টিকের ফাইবার জড়িয়ে যায় কিন্তু তা দৃষ্টিগোচর হয়নি। যত বেশি গবেষণা হবে ততই পরিষ্কার হয়ে যাবে যে প্লাস্টিক দূষণ সর্বব্যাপী।