আমাদের গ্রহ পৃথিবীতে জীব বৈচিত্র্য বিস্তারের আগে, কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অমেরুদণ্ডী প্রাণী বা কীটের আধিক্য ছিল। সেসময় পৃথিবীতে অর্থাৎ এই ‘ওয়ার্মওয়ার্ল্ড’-এ নল-আকৃতির প্রাণীদের আধিপত্য ছিল। এই প্রাচীন প্রাণীজগতের প্রাচীনতম প্রাণী ছিল এক বিশাল মাংসাশী কীট যার জীবাশ্ম সম্প্রতি পাওয়া গেছে। ৫১৮ মিলিয়নেরও বেশি বছর আগে, প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার-লম্বা এই প্রাণীটি ছিল সবচেয়ে বড়ো জলজ সাঁতারু প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। প্রাণীটি তার তুলনামূলকভাবে বিশাল চোয়াল, লম্বা অ্যান্টেনা এবং পাখনা নিয়ে অনেক প্রাণীদের ভয়ের কারণ ছিল। কোরিয়া পোলার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (কেপিআরআই) বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল আনুষ্ঠানিকভাবে এই নতুন প্রজাতির নাম দিয়েছে টিমোরেবেস্টিয়া কোপ্রি, লাতিন ভাষায় যার অর্থ হল ‘ভীতিপ্রদ প্রাণী’। ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী জ্যাকব ভিনথারের মতে টিমোরেবেস্টিয়া সেই সময়ের প্রাণীদের তুলনায় আকারের বিশাল ছিল এবং সম্ভবত খাদ্য শৃঙ্খলের শীর্ষের কাছাকাছি ছিল।
উত্তর গ্রিনল্যান্ডে পাওয়া ১৩টি জীবাশ্মের উপর ভিত্তি করে এই প্রজাতির আবিষ্কার। কিছু জীবাশ্মের পরিপাকতন্ত্রে গবেষকরা খাবারেরও সন্ধান পেয়েছেন। বর্তমানে, টিমোরেবেস্টিয়ার জীবিত প্রজাতি অ্যারো ওয়ার্ম নামে পরিচিত, এবং তারা সাগরে সাঁতার কাটে বেড়ানো অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় বেশ ছোটো। তবুও, এই কীটগুলো বর্তমানে আধুনিক খাদ্য শৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ শিকারী যারা জলজ বাস্তুতন্ত্রের আণুবীক্ষণিক জীব জুপ্ল্যাঙ্কটনের মতো প্রাণীদের খেয়ে থাকে। জীবাশ্মের উপর গবেষণা করে জানা গেছে যে অ্যারো ওয়ার্ম-এর পূর্বপুরুষরা ৫৩৮ মিলিয়ন বছর আগে বসবাস করত এবং এটি পোকামাকড়, মাকড়সা বা প্রাচীন সন্ধিপদী প্রাণী অথবা কঠিন আবরণযুক্ত জলজ প্রাণী বা ক্রাস্টেসিয়ানের চেয়ে কয়েক মিলিয়ন বছর পুরানো। তাই গবেষকদের অনুমান যে তারা শিকার করত এবং সন্ধিপদী প্রাণীদের আগে মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। সম্ভবত তারা ১০-১৫ মিলিয়ন বছর ধরে রাজত্ব করেছিল আর তারপর আরও সফল, গোষ্ঠীর দ্বারা স্থানান্তরিত হয়েছিল। তবে এরাই ওই সময়ের একমাত্র শিকারী ছিল না যারা তাদের স্থান থেকে বিচ্যুত হয়েছিল। ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের সময় জীব বৈচিত্র্যের দ্রুত বিবর্তন ঘটে এবং খাদ্য শৃঙ্খলকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে। কিছু বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই ‘ওয়ার্মওয়ার্ল্ড’ এর সময়ে এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মঞ্চ তৈরি হয়।