বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ মিলিয়ন থেকে ৪০ মিলিয়ন যানবাহনে প্রাকৃতিক গ্যাস ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়, ইউরোপ এবং এশিয়ায় এই ধরনের ইঞ্জিন সবচেয়ে জনপ্রিয়। গ্যাস কোম্পানি তাদের প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে কম্প্রেসার চালিয়ে অনেক মানুষের বাড়িতে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। এই প্রাকৃতিক গ্যাস পেট্রোল বা ডিজেল ইঞ্জিনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার বলে মনে করা হয় কারণ এতে কার্বনকণা ও দূষিত পদার্থ কম থাকে।
কিন্তু গাড়ি বা কম্প্রেসারে এই প্রাকৃতিক গ্যাস-চালিত ইঞ্জিন যখন চালু করা হয়, তখন তার থেকে মিথেন নির্গত হয়, এই মিথেন তাপ আটকে রেখে গ্রিন হাউস গ্যাস হিসেবে কাজ করে। প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করার পদক্ষেপ বেশ ভালো হলেও, যখন এই গ্যাস ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয় তখন ইঞ্জিন চালু হলেই এমন প্রাকৃতিক গ্যাস নির্গত হয়, যা দগ্ধ হয় না, ফলে তাতে মিথেন থাকে। তখন এটা অপসারণ করার একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে, তা নাহলে আরও মারাত্মক গ্লোবাল ওয়ার্মিং ঘটবে, কারণ মিথেন, কার্বন ডাই অক্সাইডের ২৫ গুণ বেশি হারে বায়ু মন্ডলে তাপ আটকে রাখে। এ কথা জানিয়েছেন এই গবেষণার সহ-লেখক SLAC ন্যাশনাল অ্যাক্সিলারেটর ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্ক অ্যাবিল্ড-পেডারসেন।
মিথেন অপসারণের অনুঘটক নিম্ন তাপমাত্রায় বিশেষ কার্যকরী নয়, আবার উচ্চ তাপমাত্রায় এই অনুঘটক নষ্ট হয়ে যায়।
নেচার ক্যাটালাইসিস জার্নালে প্রকাশিত, ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং SLAC ন্যাশনাল অ্যাক্সিলারেটর ল্যাবরেটরির মধ্যে একটি গবেষণায় বলা হয়েছে প্যালাডিয়াম অনুঘটক কম তাপমাত্রায়, ৩৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৬৬২ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে কম তাপমাত্রায় ইঞ্জিন থেকে নির্গত মিথেন অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছে, এবং উচ্চ তাপমাত্রায় এই প্রক্রিয়ার স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে।
গবেষকরা তাদের কাজে দেখান যে প্যালাডিয়াম পরমাণু সেরিয়াম অক্সাইডের উপস্থিতিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে, ইঞ্জিন চালু হলে যে মিথেন নির্গত হয় তাকে অপসারণ করে , এমনকি যখন ইঞ্জিন সবে চালু হয় তখনও এটা মিথেনকে সরিয়ে দিতে সক্ষম। তারা দেখেছেন যে ইঞ্জিন থেকে নিষ্কাশিত সামান্য পরিমাণ কার্বন মনোক্সাইড ঘরের তাপমাত্রায় প্রতিক্রিয়ার জন্য সক্রিয় সাইট গঠনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কার্বন মনোক্সাইড প্যালাডিয়ামের একক পরমাণুগুলিকে দুই বা তিন-পরমাণুর ক্লাস্টার বা গুচ্ছ তৈরি করতে সাহায্য করেছিল যা কম তাপমাত্রায় মিথেন অণুগুলিকে দক্ষতার সাথে ভেঙে দেয়।
গবেষণার ফলাফল বাণিজ্যিকভাবে গাড়ির ইঞ্জিনে যুক্ত করার আগে গবেষকরা এই বিষয়ে আরো কাজ করবেন। এ নিয়ে গবেষকরা বাণিজ্য ক্ষেত্রে যেমন শিল্প অংশীদারদের সাথে আলোচনা করছেন, তেমন প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির সাথে বাণিজ্যিকীকরণের জন্য কাজ করছেন।