প্রতিষেধকই হাম ঠেকানোর একমাত্র উপায়

প্রতিষেধকই হাম ঠেকানোর একমাত্র উপায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

শিশুদের মধ্যে মিজ়লস রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার থেকে চালু হয়েছে প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মসূচি। ঠিক যে ভাবে পোলিয়ো দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে পোলিয়ো টিকা দেওয়ার নিয়ম চালু রয়েছে, ঠিক সে ভাবেই মিজ়লস দূর করতে ও মাম্পস বা রুবেলা নিয়ন্ত্রণের জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক শিশুকে তাই এই প্রতিষেধক দেওয়া জরুরি। আসলে আমাদের দেশের অনেক শিশুই রুটিন ভ্যাকসিনেশনের আওতার বাইরে থাকে। এই রোগের ক্ষেত্রে শিশুদের ভোগান্তি যেমন বেশি, তেমনই জটিলতাও বাড়তে পারে।
মিজ়লস মানে হল হাম। হাম অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসঘটিত রোগ। সংক্রামিত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। হাম এতটাই সংক্রামক যে একজন সংক্রমিত ব্যক্তি, দশজন টিকাবিহীন ব্যক্তির মধ্যে নয়জনকেই সংক্রমিত করার ক্ষমতা রাখে। একজন ব্যক্তি ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার প্রায় ১০ থেকে ১২ দিন পরে তার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে মূলত জ্বর আসে সঙ্গে থাকে গায়ে ছোটো-ছোটো লাল র্যাশ, নাক দিয়ে জল গড়ায়। এর সঙ্গে বা পরে নিউমোনিয়া হলে এ রোগে জটিলতা বাড়তে পারে। কখনও কখনও হামের কারণে কানের সংক্রমণ, ডায়রিয়াও হতে পারে। কিছু বিরল ক্ষেত্রে হামের কারণে এনসেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহও হতে পারে। শিশুদের জন্য এটা অনেক ক্ষেত্রে প্রাণঘাতীও হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশে সাধারণত বাচ্চার ন’মাস, পনেরো মাস ও পাঁচ বছর বয়সে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এক বছরের কম বয়সী শিশুরা তাদের মায়ের কাছ থেকে প্রাকৃতিক সুরক্ষা পেয়ে থাকে যা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। ফলত টিকা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। একবার টিকা দেওয়া হলে, হাম হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং সারা জীবন শিশুটি সুরক্ষিত থাকে বলে মনে করা হয়। যদিও টিকা নেওয়া সত্ত্বেও ১০০ জনের মধ্যে একজন ভাইরাসের সংস্পর্শে আসলে হাম রোগে আক্রান্ত হতে পারে, তবে টিকা দেওয়া ব্যক্তির সংক্রমণ সাধারণত কম হয়।
বিশ্বব্যাপী, কোভিড মহামারীর কারণে শৈশবকালীন টিকাদানের কর্মসূচি হ্রাস পেয়েছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হামের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা অর্জনের জন্য প্রায় ৯৫% শিশুদের টিকাদানের আওতায় আনা প্রয়োজন। এর ফলে যারা প্রতিষেধক পায়নি তারা সুরক্ষিত থাকবে, আর ভাইরাসটিও ছড়াবে না। সাম্প্রতিক কালে অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। গত বছরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইউরোপে হামের প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রে ৪৫ গুণ বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে, ২০২২ সালে ৯৪১ জন হামে আক্রান্ত হলেও ২০২৩ সালে ৪২,২০০টি কেস রেকর্ড করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায়, ভারত ও পাকিস্তানেও সম্প্রতি প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *