মোনার্ক প্রজাপতি বা সাধারণভাবে মোনার্ক (ড্যানাস প্লেক্সিপ্পাস) হল নিম্ফালিডি গোত্রের একটি প্রজাপতি। বিভিন্ন অঞ্চলের উপর নির্ভর করে এদের বিভিন্ন নামে ডাকা হয় যেমন- মিল্কউইড, কমন টাইগার, ওয়ান্ডারার, বা কালো শিরাযুক্ত বাদামী রঙের প্রজাপতি। এই প্রজাপতিকে বিশেষ করে উত্তর আমেরিকায় দেখতে পাওয়া যায় তবে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে বা তার আগে, সারা বিশ্বে মোনার্ক প্রজাপতি ছড়িয়ে পড়ে এবং বর্তমানে এদের অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ওশেনিয়ার অন্যান্য অংশ এবং ভারতবর্ষেও দেখতে পাওয়া যায়। মোনার্ক প্রজাপতির অভিবাসন খুবই চিত্তাকর্ষক। অন্য কোনো প্রজাতির প্রজাপতি এই দ্বি-মুখী যাত্রা সম্পূর্ণ করে বলে জানা যায়না। ঠিক পাখিদের মতো এরা শীতের সময় দক্ষিণ দিকে উড়ে যায় এবং তাপমাত্রা উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে উত্তরে ফিরে আসে। এই পতঙ্গ দিনে ১০০ মাইল অতিক্রম করতে পারে, এবং চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য মোট ৩০০০ মাইলের দূরত্ব অতিক্রম করে। নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করতে তারা প্রায়শই বাতাসের স্রোতের টানে উড়ে চলে। সম্প্রতি PLOS One জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রজাপতির ডানার ধরন এদের অভিবাসনে সাহায্য করে।
গবেষণা অনুসারে মোনার্ক প্রজাপতি যখন উড়ে বেড়ায় তাদের ডানার প্রান্তে গাঢ় এবং হালকা রঙের কারুকার্য এদের চারপাশে গরম এবং শীতল হাওয়ার এক অসম প্যাটার্ন তৈরি করে। প্রজাপতির পাখার গাঢ় অংশগুলোর আশপাশ সামান্য উষ্ণ এবং সাদা অংশগুলো সামান্য শীতল হওয়ার দরুন ক্ষুদ্র, বায়ুর ঘূর্ণায়মান পকেট, দাগের চারপাশে তৈরি হতে পারে। এই স্রোত পতঙ্গের দেহকে কিছুটা উপরে উঠতে সাহায্য করে এবং প্রজাপতির পাশ দিয়ে কীভাবে বাতাস প্রবাহিত হয় তা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের ডানার উপর টান কমাতে সাহায্য করে। মোনার্ক প্রজাপতি এবং অন্যান্য প্রজাপতির ডানা জুড়ে এই দাগের আকারের তুলনা এই ধারণাটিকে সমর্থন করে। যে প্রজাপতিগুলো অভিবাসন করে না তাদের মোনার্ক প্রজাপতির তুলনায় ছোটো আকারের সাদা দাগ ছিল। গবেষকদের আশা ইঞ্জিনিয়াররা মোনার্ক প্রজাপতির এই সাদা দাগ অনুসারে আরও দক্ষ ড্রোন তৈরি করতে সক্ষম হবেন। প্রজাপতির ডানার রঙের অনুসারে ড্রোনের রঙ নির্দিষ্ট করলে ড্রোন আরও বেশি বহন করতে সক্ষম হবে, কারণ এই রঙ তাদের অতিরিক্ত উত্তোলন পেতে সহায়তা করবে। গবেষণা প্রমাণ করে যে রঙের এই সূক্ষ্ম পরিবর্তনও বড়ো পার্থক্য আনতে পারে। যে সব মোনার্ক প্রজাপতি আভিবাসনের ফলে মেক্সিকোতে উড়ে পৌঁছে যায় তাদের ডানার সাদা দাগ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে যাত্রা শেষ করা প্রজাপতিদের তুলনায় মাত্র ৩% বড়ো। সংখ্যাটি পরিমাণে কম মনে হলেও, এটি মোনার্ক প্রজাপতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি অভিবাসনের সময় জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যে তফাত গড়ে দেয়।