কল্পনা করুন আপনি বিষুবরেখা বরাবর কোনো একদিন রৌদ্রোজ্জ্বল সমুদ্র সৈকতে হাঁটছেন। পায়ের নীচে পৃথিবী ঘণ্টায় ১০৪০ মাইল বেগে পূর্ব দিকে ঘুরছে। কিন্তু আপনি, আপনার পায়ের নীচের বালি এবং আশেপাশের সাধারণ সব জিনিস একই গতিতে চলছে, তাই আপনার কাছে হাঁটা বেশ ধীর গতির এবং আরামদায়ক মনে হয়। হঠাৎ আপনার পায়ের নীচে পৃথিবী থেমে গেল, কী হবে? আপনি ছিটকে চলে যাবেন। নিউটনের প্রথম গতিসূত্র অনুসারে, আপনি প্রাথমিকভাবে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১০৪০ মাইল বেগে পূর্ব দিকে উড়ে যাবেন। আপনি যেখানেই অবতরণ করুন না কেন, সমুদ্র বা স্থল এই শক্তির প্রভাবে সম্ভবত আপনার মৃত্যু হবে।
কোলগেট ইউনিভার্সিটির আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল জিওসায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক জোসেফ লেভি বলছেন, জলও এই আকস্মিক ত্বরণ অনুভব করবে, এই ঘটনার আগে সমুদ্রকে কিছুটা ঢলে পড়তে দেখবেন। মাটিতে প্রোথিত হওয়া সত্ত্বেও গাছ এবং ভবনগুলিও নিরাপদ থাকবে না। উপাদানগুলি সংকোচনের অধীনে শক্তিশালী তবে টানের আওতায় খুব দুর্বল। ইটের ভবন শত শত লোককে ধরে রাখতে পারে কারণ এর মেঝে এবং সাপোর্ট বিমগুলি তাদের ওজনের নীচে আঁটোসাঁটো হয়ে থাকে। কিন্তু পৃথিবীর আকস্মিক থেমে যাওয়াতে ভবনটির পূর্ব দিকের গতিজাড্য ইটগুলিকে একসাথে ধরে রাখা মর্টারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে, তাই পুরো কাঠামোটি ভেঙ্গেচুরে যাতে পারে।
প্রাকৃতিক ক্ষেত্রে আচমকা কোনো কিছুই থেমে যায় না। ধীরে ধীরে মন্থরতা আপনাকে আকাশে ছুঁড়ে না ফেললেও একবার পৃথিবীর ঘোরা বন্ধ হয়ে গেলে, অনেক সমস্যা সৃষ্টি হবে। পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় বছরের মধ্যে, অর্ধেক গ্রহ রাতে এবং অর্ধেক পূর্ণ আলোতে থাকবে। ৬ মাসে এক দিন হবে আর সেখানে ছমাস ব্যাপী সূর্যের আলোতে ফসল পুড়ে যাবে, জল শুকিয়ে যাবে। আর যখন ৬ মাস রাত থাকবে তখন ঠাণ্ডায় বাকি গাছপালা জমে বরফ হয়ে যাবে বা মরে যাবে। আতঙ্কিত হবেন না, তবে পৃথিবীর ঘূর্ণন টাইডাল ব্রেকিং প্রক্রিয়ার জন্য ধীর হয়ে যাচ্ছে। চাঁদের মাধ্যাকর্ষণের ফলে আমাদের গ্রহের ঘূর্ণনে একটি অত্যন্ত ছোট টান তৈরির ফলে এটা হয়। নাসা জানাচ্ছে, তাই প্রতি শতাব্দীতে, পৃথিবীর ঘূর্ণন ২.৩ মিলিসেকেন্ড কমে যাচ্ছে। লেভি বলেন, কিন্তু এটা অসম্ভব যে চাঁদ কখনও পৃথিবীকে সম্পূর্ণভাবে থামিয়ে দেবে। পৃথিবী চাঁদের চেয়ে অনেক বড়ো ফলে এর কৌণিক গতিবেগ অনেক বেশি।