আমাদের পায়ের নিচে মাটি। সেই মাটির নিচের দুনিয়াটাও খুব একটা শান্ত নয়। সেখানেও প্রতিমুহূর্তে নড়াচড়া রয়েছে, পরিবর্তন রয়েছে, আছে স্বাভাবিক ভাঙাগড়ার খেলা। ভূগর্ভের গোপন এইসব গতিবিধি থেকেই ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত কিংবা জলবায়ু বদলের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কিন্তু উত্তর খোঁজার বাহন যদি হয় মাটি থেকে ৪০০ মাইল উপরে ঘুরতে থাকা কোনও কৃত্রিম উপগ্রহ?
নাসার বিজ্ঞানীরা ব্যবস্থা করেছেন ঠিক এমনটাই। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত জেট প্রপালশান ল্যাবরেটরির গবেষকরা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আর তথ্য বিশ্লেষণের নানান সৃজনশীল পদ্ধতিতে খুঁটিয়ে দেখছেন ঠিক কোন কোন ঘটনা ঘটে চলেছে পৃথিবীর গর্ভে। আমাদের গ্রহের অন্দরে, এমনকি উপরিতলেও অহরহ বিভিন্ন স্তরে উত্থান পতন লেগেই রয়েছে। সাধারণ চোখে সেগুলো মোটেই ধরা পড়ে না। কিন্তু দুটো টেকটোনিক প্লেট যেখানে মিশছে সেই চ্যুতিরেখা বরাবর এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটে যা হয়তো ভূমিকম্প অথবা লাভা নিঃসরণের সরাসরি ইঙ্গিত।
তথ্য জোগাড় করতে ভূতাত্ত্বিকদের বারবার একটা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যেতে হত। সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষার পর বলা যেত ভূগর্ভে ঠিক কী চলছে। কিন্তু বিগত নব্বইয়ের দশক থেকেই মার্কিন মুলুকের হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থার তরফ থেকে রাডার ব্যবহার চালু হয়। রাডার লাগিয়ে দেওয়া হত বিমানে। এবার সেই পদ্ধতিতেই সামান্য রদবদল ঘটিয়ে রাডারকে বসান হচ্ছে স্যাটেলাইটে। তাতে তথ্য বিশ্লেষণে বেশ কিছু নতুন আঙ্গিক সৃষ্টি হয়েছে।
জেট প্রপালশান ল্যাবরেটরির তত্ত্বাবধানে থাকা ‘আর্থ সারফেস অ্যান্ড ইন্টেরিয়র গ্রুপ’-এর প্রধান পল লুন্ডগ্রেন বলছেন, মনে হচ্ছে পৃথিবীর মানচিত্র যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। উনি আরও যোগ করলেন, কোনও কোনও সময় আলোকচিত্র দেখেই আন্দাজে বলা যায় কোন কারণে আগ্নেয়গিরি থেকে উদ্গিরন হচ্ছে।