প্রাণীরা খাবারের সন্ধানে বহু দূর বিচরণ করে। বিভিন্ন হরিণ প্রজাতি, নেকড়েরা স্থলভাগে মাইলের পর মাইল ঘুরে বেড়ায় কিন্তু সামুদ্রিক পাখিদের মতো কেউ নয়। আর্কটিক টার্ন তাদের বার্ষিক অভিবাসনের অংশ হিসাবে আর্কটিক থেকে অ্যান্টার্কটিকা যায় আবার ফিরে আসে। বিচরণকারী পাখি অ্যালবাট্রস (ডিওমিডিয়া এক্সুলানস) তাদের সারা জীবনে যতটা বিচরণ করে তার দূরত্ব দশবার চাঁদে যাওয়া ও ফিরে আসার সমান। সামুদ্রিক পাখিরা কীভাবে তাদের ওড়ার পথ বেছে নেয় এবং খাবার খুঁজে ফেরে সে সম্পর্কে অনেক গবেষণা হয়েছে। গবেষকদের মতে তারা স্থানীয় অবস্থার মূল্যায়ন করতে তাদের দৃষ্টিশক্তি বা গন্ধের অনুভূতি ব্যবহার করে। অ্যালবাট্রস পাখিরা খাবারের খোঁজে প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি ভ্রমণ করতে পারে, যদিও, পাখিরা কোন অঞ্চলে যাবে তা নির্ধারণের জন্য তারা পরিবেশ থেকে কী ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে তা আজও অজানা। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে সামুদ্রিক পাখিরা কেবল কোথায় খাদ্য খুঁজে পাবে সে সম্পর্কেই তথ্য খোঁজে না, বরং কীভাবে তা দক্ষতার সাথে করা যায় তারও তথ্য সংগ্রহ করে। এই গবেষণায় গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে বিচরণকারী পাখি অ্যালবাট্রস তাদের শব্দের অনুভূতি বা ইনফ্রাসাউন্ড নামক একটি খুব কম-ফ্রিকোয়েন্সির শব্দের জন্য প্রতিক্রিয়া দেখায়, এবং হাজার হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করতে পারে।
যদিও এই ধরনের শব্দ মানুষের শ্রুতিগোচর নয় কিন্তু এমন অনেক প্রাণী রয়েছে যারা ইনফ্রাসাউন্ড শুনতে পায়। যখন সমুদ্রের তরঙ্গ একসাথে উপকূলরেখায় আছড়ে পড়ে, তখন তারা মাইক্রোবারাম নামক ইনফ্রাসাউন্ড সৃষ্টি করে। যেহেতু সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে গভীরে থাকা পুষ্টি উপকূলীয় অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করে তোলে আর সামুদ্রিক শৈবাল এবং প্লাঙ্কটনের বৃদ্ধিকে সমর্থন করে ফলত মাছ, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদের জন্য এই অঞ্চলগুলো খাদ্য সরবরাহ করে। এই অঞ্চলগুলো কোথায় রয়েছে সে সম্পর্কে ইনফ্রাসাউন্ড পাখিদের তথ্য সরবরাহ করে আর পাখিরা খাবারের সন্ধানে সেখানে উড়ে যায়। অ্যালবাট্রসের মতো বৃহৎ সামুদ্রিক পাখির জন্য দক্ষ চারণ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের ডানার দৈর্ঘ্য ৩.৫ মিটার, তাই আকারের কারণে দক্ষতার সাথে উড়তে তাদের বাতাসের উপর নির্ভর করতে হয়। অনেক বেশি তরঙ্গ মানে বাতাসের বেগও শক্তিশালী। আর আমরা জানি যে বিচরণকারী অ্যালবাট্রস দক্ষতার সাথে উড়তে বাতাসের উপর নির্ভর করে। গবেষণায় জানা গেছে যে ইনফ্রাসাউন্ড তাদের সংকেত প্রদান করতে পারে কোন অঞ্চলে তারা বিচরণ করবে বা খাবার খুঁজবে। উপকূলরেখায় ঢেউ আছড়ে পড়লে ইনফ্রাসাউন্ড তৈরি হয় এবং অনেক উপকূলীয় সামুদ্রিক পাখি তাদের উড়ানের পথ বেছে নিতে এবং তাদের প্রজনন অঞ্চলে ফিরে যেতে এই উপকূলীয় পথ ব্যবহার করে। সুতরাং, ইনফ্রাসাউন্ড সামুদ্রিক পাখিদের উপকূলরেখার অবস্থান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়।