সূর্যালোকে লাল এবং নীল আলোর মধ্যে ভারসাম্য রয়েছে, তবে আমরা এখন যেভাবে বাস করি তাতে নীল আলোর প্রতিপত্তি বেশি। এটি মাইটোকন্ড্রিয়াল ফাংশন এবং এটিপি উত্পাদন হ্রাস করে। নীল আলোয় দীর্ঘমেয়াদী সময় থাকলে তা আমাদের শারীরিক প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলে এবং রক্তে শর্করার চলন ব্যাহত করতে পারে দীর্ঘমেয়াদে যার থেকে ডায়াবেটিস হতে পারে। সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এবং ইউসিএল-এর একটা নতুন সমীক্ষা অনুসারে, নির্দিষ্ট তরঙ্গে একজন ব্যক্তির পিঠে ১৫ মিনিটের জন্য লাল আলো ফেললে তা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন যে ৬৭০ ন্যানোমিটার (এনএম) লাল আলো মাইটোকন্ড্রিয়া, যা কোশের ক্ষুদ্র পাওয়ার হাউস তার শক্তি উৎপাদন উদ্দীপিত হয় ফলে শরীর গ্লুকোজ ব্যবহার বাড়ায়। এতে গ্লুকোজ গ্রহণের পরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ২৭.৭% হ্রাস পায় আর সর্বাধিক গ্লুকোজ বৃদ্ধি ৭.৫% হ্রাস হয়।
জার্নাল অফ বায়োফটোনিক্সে প্রকাশিত এই গবেষণা সম্ভাব্য জনস্বাস্থ্য সমস্যার উল্লেখ করেছে। LED আলোর ব্যবহারে স্বাস্থ্যের এক দীর্ঘমেয়াদী পরিণতির কথা বলা হয়েছে। গবেষকদের মতে LED আলোর প্রাধান্য রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করছে। LED আলো আলোক বর্ণালীর নীল প্রান্তের দিকে আলো নির্গত করে, এতে খুব সামান্য লাল আলো নির্গত হয়। সম্ভবত নীল আলোতে দীর্ঘ সময় থাকার জন্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়। মাইটোকন্ড্রিয়া অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ ব্যবহার করে নিউক্লিওসাইড অ্যাডেনোসিন ট্রাইফসফেট (এটিপি) তৈরি করে যা অত্যাবশ্যক কোশীয় প্রক্রিয়াগুলোর জন্য শক্তি সরবরাহ করে। পূর্ববর্তী গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে দীর্ঘ-তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো প্রায় ৬৫০-৯০০ এনএম (লাল আলো থেকে ইনফ্রারেড রেঞ্জ অবধি বিস্তৃত) মাইটোকন্ড্রিয়ার ATP উৎপাদন বাড়াতে পারে যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করে এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্য ও জীবনকাল উন্নত করে।
গবেষকদের মতে এতে অ্যাবস্কোপাল প্রভাবের মতো কাজ হয়, অ্যাবস্কোপাল প্রভাবে ক্যান্সারের চিকিত্সায় প্রাথমিক টিউমারে নির্দিষ্ট বিকিরণের ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে অবস্থিত সেকেন্ডারি টিউমারগুলি সঙ্কুচিত হতে পারে। একইভাবে, পূর্ববর্তী গবেষণায় ইঁদুরের পিঠে বেছে ৬৭০ এনএম আলো ফেলে দেখা গেছে ATP-বৃদ্ধি ঘটেছে যা পারকিনসন্স রোগ এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি উভয় রোগের মডেলে লক্ষণগুলোর উন্নতি করে। ৩০ জন সুস্থ অংশগ্রহণকারী নিয়ে, ১৫ জন অংশগ্রহণকারীকে পনেরো মিনিট ৬৭০এনএম লাল আলোতে রেখে তাদের গ্লুকোজ পান করতে দেওয়া হয়েছিল। বাকি ১৫ জনকে কোনো আলোর মধ্যে না রেখে গ্লুকোজ পান করতে দেওয়া হয়েছিল। পনেরো মিনিট অন্তর পরীক্ষা করে দেখা গেছে প্রথম দলের অংশগ্রহণকারীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরবর্তী দুঘণ্টায় কম ছিল, আর গ্লুকোজের সর্বোচ্চ মাত্রা অন্যদলের অংশগ্রহণকারীদের তুলনায় কম ছিল। গবেষকদের মতে এই গবেষণা সুস্থ মানুষের ওপর করা হলেও, ওষুধ, ইনজেকশন ছাড়া লাল আলো দ্বারা এভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।