পরিযায়ী পাখির ঝাঁক প্রতি বছর এক দেশ থেকে নির্দিষ্ট কোনো দেশে উড়ে যায়। এই ঘটনা বছরের পর বছর যাবত চলতে থাকে। কিন্তু তারা প্রতি বছর কীভাবে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছোয়? গবেষকরা বলছেন পরিযায়ী পাখিরা চৌম্বকীয় কম্পাসের মতো প্রক্রিয়া ব্যবহার করে নির্ভুলতার সাথে নেভিগেট করে সঠিক দিশায় উড়ে যেতে সক্ষম। ওল্ডেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী ডঃ করিনা ল্যাঞ্জেব্রেক এবং প্রফেসর ডঃ মিরিয়াম লিডভোগেলের নেতৃত্বে একটা দল এবং উইলহেমশেভেনের এভিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউট “ভোগেলওয়ার্ট হেলগোল্যান্ড” এখন কয়েকশ পাখির প্রজাতির জিনোমের তুলনা করছেন। তারা প্রমাণ পেয়েছেন যে পাখিদের চোখে নির্দিষ্ট এক ম্যাগনেটোরেসেপ্টর প্রোটিন থাকে যা চৌম্বক ক্ষেত্র বুঝে পাখিদের নেভিগেট করতে সাহায্য করে। প্রথম জার্মান -বৃটিশ গবেষকরা জানিয়েছিলেন, ক্রিপ্টোক্রোম 4 হল ম্যাগনেটোরিসেপটর, যা পাখিদের রেটিনায় থাকে। আর এটা মুরগি বা পায়রার মতো এক স্থানে বসবাসকারী পাখির তুলনায় রবিনের মতো পরিযায়ী পাখির ক্ষেত্রে বেশি সংবেদনশীল।
বর্তমান গবেষণায় ৩৬৩ পাখির প্রজাতির ক্ষেত্রে ম্যাগনেটোরিসেপশনের বিবর্তন দেখা হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন যে পাখিদের ক্রিপ্টোক্রোম 4 প্রোটিনকে এনকোড করা জিনে, উল্লেখযোগ্য বিবর্তনীয় পরিবর্তন হয়েছে আর কিছু পাখির দলে এটা সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে গেছে। পাখিদের জিন থেকে প্রাপ্ত এই ফলাফল বিভিন্ন পরিবেশগত অবস্থার সাথে অভিযোজনের নির্দেশক। তার সাথে ক্রিপ্টোক্রোম 4 সেন্সর প্রোটিন হিসাবে কাজ করে সেই তত্ত্বকে সমর্থন করে।
পাখিদের আভ্যন্তরীণ ক্লক বা জৈব ঘড়ি নিয়ন্ত্রণকারী অন্যান্য ক্রিপ্টোক্রোম সমস্ত পাখি প্রজাতিতে মোটামুটি সদৃশ, কিন্তু ক্রিপ্টোক্রোম 4 প্রজাতি ভেদে আলাদা হয়েছে। অর্থাৎ এটা নির্দিষ্ট পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। টিয়া, হামিংবার্ড, টাইরানি এই জাতীয় পাখিদের বিবর্তনের সময়ে ক্রিপ্টোক্রোম 4 লুপ্ত হয়েছে, অর্থাৎ এদের শরীরে ক্রিপ্টোক্রোম 4 -এর থেকে প্রোটিন তৈরি হয় না। তাই বোঝা যায় পাখিদের বেঁচে থাকার জন্য এটা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গবেষণাটি প্রসিডিংস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি- বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।