নানা অঙ্গের বয়স ভিন্ন ভিন্ন

নানা অঙ্গের বয়স ভিন্ন ভিন্ন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

নতুন গবেষণা বলছে যে আমাদের সময়ানুক্রমিক বয়স সত্যিই একটি সংখ্যা মাত্র। আমাদের শরীরে রোগের ঝুঁকি জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল আমাদের প্রতিটি অঙ্গের জৈবিক বয়স। বর্তমানে আমারা কটা জন্মদিন অতিবাহিত করেছি অথবা আমাদের সময়ানুক্রমিক বয়স আমাদের স্বাস্থ্যের মূল্যায়নের জন্য আজ আর ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে মনে করা হচ্ছে। একটি নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের বয়স ভিন্ন, এবং প্রতিটি অঙ্গের জৈবিক বয়স কাগজে থাকা ব্যক্তির বয়সের সাথে এক নয়।
নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত নতুন গবেষণায় ৫০ বছরের বেশি বয়সী প্রতি পাঁচজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনকে “এক্সট্রিম এজার” হিসেবে চিহ্নিত করেছে অর্থাৎ সেই ব্যক্তির একটি অঙ্গ তার সমবয়সী অন্য ব্যক্তিদের তুলনায় অনেক তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যাচ্ছে বা তার ‘এজিং’ হচ্ছে। প্রতি ৬০ জনের মধ্যে ১ জন প্রাপ্তবয়স্কের দুটি বা ততোধিক অঙ্গের দ্রুত বয়স বৃদ্ধি হচ্ছে। গবেষকের দল মস্তিষ্ক, হার্ট, ইমিউন সিস্টেম এবং কিডনি সহ বিভিন্ন অঙ্গের সম্পর্কিত প্রোটিন পরিমাপ করেছেন। গবেষকরা আশা করেন যে তাদের ফলাফল ভবিষ্যতে এমন রক্ত পরীক্ষার দিকে পরিচালিত করবে যা দ্রুত বয়স বৃদ্ধি পাওয়া অঙ্গগুলোকে চিহ্নিত করতে পারবে, এবং রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগে তার চিকিত্সার ব্যবস্থা করতে পারবে। নির্দিষ্ট অঙ্গ থেকে উদ্ভূত প্রোটিন সন্ধান করতে গবেষকের দল ৫৫০০ জনেরও বেশি মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিল যাদের মধ্যে কোনও সক্রিয় রোগ বা ক্লিনিক্যালি অস্বাভাবিক বায়োমার্কার ছিল না। বিজ্ঞানীরা তাদের জিনের ক্রিয়াকলাপ পরিমাপ করে এই প্রোটিন কোথা থেকে এসেছে তা নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিল। যখন একটি অঙ্গে প্রোটিনের জন্য জিনের অভিব্যক্তি চারগুণ বেশি হয়, তখন সেই অঙ্গটি ওই প্রটিনের উত্স হিসেবে চিহ্নিত হয়। এরপর তারা এক ফোঁটা রক্তে হাজার হাজার প্রোটিনের ঘনত্ব পরিমাপ করে দেখেন যে তাদের মধ্যে প্রায় ৯০০টি অর্থাৎ পরিমাপ করা প্রোটিনের প্রায় ১৮% একটি একক অঙ্গের জন্য নির্দিষ্ট। যখন সেই প্রোটিন একটি নির্দিষ্ট বয়সের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ঘনত্ব থেকে পরিবর্তিত হয়, তখন তা সংশ্লিষ্ট অঙ্গের ত্বরান্বিত বার্ধক্য বোঝায়। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির নিউরোলজির অধ্যাপক টনি উইস-কোরে ব্যাখ্যা করেন যে তারা নিশ্চিত যে একটি বিশেষ প্রোটিন সম্ভবত মস্তিষ্ক থেকে আসে এবং কোনো না কোনোভাবে রক্তে শেষ হয়। যদি সেই প্রোটিনের ঘনত্ব রক্তে পরিবর্তিত হয়, তবে তা সম্ভবত মস্তিষ্কেও পরিবর্তন হতে পারে – এবং মস্তিষ্কের বয়স কীভাবে হয় সে সম্পর্কে ধারণা দেয়। অধ্যয়নে অংশগ্রহণকারীদের অঙ্গ-নির্দিষ্ট প্রোটিন তুলনা করে, গবেষকরা একটি বয়সের ব্যবধান অনুমান করতে সক্ষম হন – অঙ্গের জৈবিক বয়স এবং ব্যক্তির সময়ানুক্রমিক বয়সের মধ্যে পার্থক্য। উদাহরণস্বরূপ, যাদের হার্ট স্বাভাবিকের চেয়ে “বয়স্ক” তাদের হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি সাধারণত বয়স্ক লোকদের হার্টের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। একইভাবে, যাদের মস্তিষ্কের দ্রুত বয়স বৃদ্ধি হয় তাদের বৌদ্ধিক দক্ষতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মস্তিষ্ক এবং রক্ত সরবরাহ তন্ত্রের দ্রুত বয়স বৃদ্ধি বর্তমান ক্লিনিকাল ব্লাড বায়োমার্কার, প্লাজমা pTau-181-এর মতোই অ্যালজাইমার রোগের অগ্রগতির পূর্বাভাস দেয়। কিডনির অতিরিক্ত মাত্রায় বার্ধক্য উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের পূর্বাভাস দেয়। উইস-কোরে অনুমান করেন যে এই গবেষণাটি একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যতে অসুস্থতার পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করতে পারে। সেই ব্যক্তি রোগ হওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন এবং সম্ভাব্যভাবে এই ত্বরান্বিত বার্ধক্যকে বিপরীত করতে বা এটিকে হ্রাস করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *