নদীর জলে পাওয়া স্ফটিক থেকে ‘স্ক্যান্ডিনেভিয়া’-র জন্ম রহস্য প্রকাশ

নদীর জলে পাওয়া স্ফটিক থেকে ‘স্ক্যান্ডিনেভিয়া’-র জন্ম রহস্য প্রকাশ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

স্ক্যান্ডিনেভিয়া বলতে উত্তর ইউরোপের ডেনমার্ক, নরওয়ে ও সুইডেন এই তিন দেশকে বোঝায়। ফিনল্যান্ডের নদীতে পাওয়া একধরনের কেলাস অধ্যয়ন করে, গবেষকরা প্রাচীন মহাদেশ, ইউরোপের হৃদয় থেকে পৃথিবীর ভূত্বকের লুকানো এক অংশ শনাক্ত করেছেন। এই গবেষণায় খনিজ জিরকনের স্ফটিকের খোঁজ ভূত্বকের গভীরে মিলেছে। জিরকন পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্যে সাধারণ এক খনিজ। আগ্নেয় শিলায় বেশ সহজে প্রাপ্ত এক খনিজ হল জিরকন, তাছাড়া রূপান্তরিত শিলায় এবং পাললিক শিলায় এটা পাওয়া যায়। রেডিওমেট্রিক ডেটিং-এ জিরকন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন আধুনিক বিশ্লেষণাত্মক কৌশল ব্যবহার করে জিরকন থেকে শিলার গঠনের সময় বের করা যেতে পারে। কারণ বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া যেমন ক্ষয়, পরিবহন, এমনকি রূপান্তর থেকেও জিরকন অক্ষত থাকতে পারে, আর জিরকনে ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াগুলোর সমৃদ্ধ বৈচিত্র্যময় রেকর্ড থেকে যায়।
খনিজ জিরকনের স্ফটিকগুলো ইউরোপের প্রাচীনতম বেডরক ৩.৭৫ বিলিয়ন বছর আগে কীভাবে গঠিত হয়েছিল তার সূত্র দেয়। এই আবিষ্কারের পেছনে, গবেষকের দল তিনটে ভূ-রসায়ন ট্রেসার অধ্যয়ন করেছিলেন, ইউরেনিয়াম-সীসা, লুটেটিয়াম-হাফনিয়াম এবং অক্সিজেন। এর থেকে তারা স্ফটিক গঠনের সময় এবং অন্যান্য প্রাচীন ভূত্বকের সাথে তাদের তুলনা করতে পেরেছেন। কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত বিবৃতি অনুসারে, এই বিশ্লেষণ থেকে বোঝা গেছে এই ভূত্বক বিজ্ঞানীদের পূর্বের ধারণার চেয়ে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বছর পুরানো আর এটা সম্ভবত গ্রীনল্যান্ডে উদ্ভূত হয়েছে। এই অধ্যয়ন মহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন আর্কিয়ান ক্র্যাটন গঠনের ওপর আলোকপাত করেছে, যা ৪-২.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে প্রিক্যামব্রিয়ান যুগে গঠিত হয়েছিল। প্রিক্যামব্রিয়ান সময় পৃথিবীর ইতিহাসের এক বিশাল অংশ, প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে গ্রহের সৃষ্টির সময়ের সাথে এই যুগ শুরু হয় এবং প্রায় চার বিলিয়ন বছর পরে জটিল, বহুকোশী জীবন-রূপের উদ্ভবের সাথে এই যুগ শেষ হয়। আর্কিয়ান ক্র্যাটনগুলো ভূত্বকের তুলনামূলকভাবে সমতল, স্থিতিশীল অঞ্চল যা প্রিক্যামব্রিয়ান যুগ থেকে অবিকৃত থেকে গিয়ে মহাদেশগুলোর প্রাচীন কেন্দ্রস্থল গঠন করে।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-রসায়নবিদ আন্দ্রেয়াস পিটারসন জানিয়েছেন মহাদেশগুলো কীভাবে গঠিত হয়েছিল তা জানতে পারলে গবেষকদের পক্ষে এটা বোঝা সহজ হয় যে আমাদের সৌরজগতে পৃথিবী কেন একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। তারা জানিয়েছেন মহাদেশের অবস্থান আর এর আশেপাশে জল ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। মহাদেশগুলো সমুদ্রের স্রোত এবং জলবায়ু উভয়কেই প্রভাবিত করে, যা পৃথিবীতে জীবনের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকরা জিওলজি জার্নালে তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করেছেন।