কোনো কিছুতে ভয় পেলে বা কোনো বিষয়ে উৎকণ্ঠা বোধ করলে আমরা প্রায়শই আমাদের বুকের বা পেটের ভিতরে উদ্বেগ অনুভব করি, কিন্তু ভয় পেলে সাধারণত আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের কোনো আঘাত করে না। যখন আমরা কোনো বিপদের সংকেত পাই যেমন- কেউ যদি আমাদের দিকে বন্দুক তাক করে বা কিছু লোক আমাদের দিকে অসন্তুষ্টভাবে তাকিয়ে থাকে, এই সংবেদনশীল অনুভূতি প্রথমে মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা অংশ অনুভূত হয়। মানুষের কানের কাছে অবস্থিত মস্তিষ্কের এই ছোটো, বাদাম-আকৃতির অংশটি যে কোনো পরিস্থিতির মানসিক প্রাসঙ্গিকতা এবং এটিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা নির্ধারণ করে। আমরা যখন কিছু দেখতে পাই, তখন মস্তিষ্কের এই অংশটি নির্ধারণ করে যে আমরা সেটা দেখে কী প্রতিক্রিয়া দেখাব। কোনো কিছু দেখে ভয় পাওয়া এই প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং এটি দ্রুত ঘটে। অ্যামিগডালা যৌক্তিক চিন্তাভাবনার সাথে জড়িত মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলো এড়িয়ে সরাসরি শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে সাহায্য করে। এই কারণে আদিম মানুষেরা যখন কোনো হিংস্র জন্তুর সম্মুখীন হত তখন তাদের চিন্তা করার বেশি সময় থাকত না। তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হত। তাই কোনো ভয়ের জিনিস দেখলে মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা থেকে একটি শনাক্তযোগ্য প্রতিক্রিয়া ট্রিগার হতে পারে এবং সেই প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমরা সচেতন নাও হতে পারি। ভয়ের পেলে স্তন্যপায়ী প্রাণীরা প্রায়শই লড়াই করে অথবা পালিয়ে যায় বা সেই জায়গা থেকে নড়তে পারে না। হিপ্পোক্যাম্পাস অংশটি অ্যামিগডালার সঙ্গে সংযুক্ত। পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোনটি নিরাপদ এবং কোনটি বিপজ্জনক তা জানান দেয় হিপ্পোক্যাম্পাস। আমাদের চোখের উপরে অবস্থিত, প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভয় প্রক্রিয়াকরণের বৌদ্ধিক এবং সামাজিক দিকের সাথে জড়িত। কোনো ক্ষেত্রে যদি মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত নেয় একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ভয়ের প্রতিক্রিয়া ন্যায়সঙ্গত, তবে অবিলম্বে মস্তিষ্ক কিছু স্নায়বিক এবং হরমোনাল প্রক্রিয়া সক্রিয় করে দেয়। ভয় প্রতিরোধে লড়াই-বা-পালিয়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া আমাদের মস্তিষ্কে সঞ্চালিত হয়। কিন্তু শরীরে বেশিরভাগ ক্রিয়া ঘটে। মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্স আমাদের পেশিতে দ্রুত সংকেত পাঠায় যাতে তারা দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। এর মধ্যে রয়েছে বুক এবং পেটের পেশী যা সেই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তার ফলে আমাদের বুকের ভিতরে একটা চাপ অনুভূত হয় এবং পেটে শক্ত হয়ে ওঠার এক অনুভূতি হয়। আমাদের শরীরের সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে জড়িত। এই স্নায়ুগুলো সারা শরীর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বিশেষ করে হার্ট, ফুসফুস এবং অন্ত্রের মতো জায়গায় এদের ঘনত্ব বেশি। এরা অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিকে ট্রিগার করে অ্যাড্রেনালিন হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোন রক্তের মধ্য দিয়ে হার্ট, ফুসফুস এবং অন্ত্রে পৌঁছায় এবং প্রতিক্রিয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আমাদের হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায় এবং হৃদপিণ্ডের সংকোচনও অনুভূত হয় যে কারণে আমরা আমাদের হার্টের সাথে তীব্র আবেগের অনুভূতি সংযুক্ত করে ফেলি। আমাদের ফুসফুসে, এই স্নায়ুতন্ত্রের সংকেতগুলো শ্বাসনালীকে প্রসারিত করে এবং প্রায়শই শ্বাসপ্রশ্বাসের হার এবং গভীরতা বৃদ্ধি পায়। কখনও কখনও এর ফলে শ্বাসকষ্টের অনুভূতি হয়। যেহেতু এই ধরনের ভয়ের পরিস্থিতিতে খাবার পরিপাক হওয়া মুশকিল, তাই স্নায়ুতন্ত্রের সক্রিয়তা অন্ত্রকে ধীর করে দেয় এবং হার্ট এবং মস্তিষ্কের মতো আরও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের জন্য অক্সিজেন এবং পুষ্টি সংরক্ষণ করতে আমাদের পেটে রক্ত প্রবাহ কমায়। আমাদের পৌষ্টিকতন্ত্রে এই পরিবর্তনগুলো ভয় এবং উদ্বেগের সাথে যুক্ত অস্বস্তি হিসাবে অনুভূত হতে পারে। সমস্ত শারীরিক সংবেদন, আমাদের বুক এবং পাকস্থলীর অনুভূতি আমাদের মেরুদন্ডের মাধ্যমে মস্তিষ্কে ফিরে আসে। আমাদের উদ্বিগ্ন এবং অত্যন্ত সতর্ক মস্তিষ্ক তারপর সচেতন এবং অচেতন উভয় স্তরেই এই সংকেতগুলো প্রক্রিয়া করে। যদিও ভয় এবং উদ্বেগের অনুভূতিগুলো আমাদের মস্তিষ্কে শুরু হয়, কিন্তু সেগুলো আমাদের শরীরেও অনুভূত হয় কারণ আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের শারীরিক কার্যাবলীকে পরিবর্তন করে। আবেগ আমাদের শরীর এবং মস্তিষ্ক উভয় ক্ষেত্রেই সঞ্চালিত হয়, কিন্তু আমরা মস্তিষ্কের মাধ্যমে তার অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন হই।