স্বপ্ন দেখতে কার না ভালো লাগে? কিন্তু সেই স্বপ্ন যখন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়, তখন সে এক ভয়ঙ্কর অনুভূতি। নিজের চেতনায় ফিরে আসতে আমাদের বেশ সময় লেগে যায়। সম্প্রতি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মেলানি স্লোনের নেতৃত্বে একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে খারাপ স্বপ্ন দেখা লুপাস রোগের সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি। ডাক্তারি পরিভাষায় লুপাসকে এসএলইও বলা হয়, সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমাটোসাস। অটোইমিউন এই রোগের ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম আমাদের নিজেদের কলা এবং অঙ্গকে আক্রমণ করে। লুপাসের কারণে সৃষ্ট প্রদাহ শরীরের বিভিন্ন সিস্টেমকে প্রভাবিত করতে পারে – হাত বা পায়ের জয়েন্ট, ত্বক, কিডনি, রক্তকণিকা, মস্তিষ্ক, হার্ট এবং ফুসফুস। গবেষণা থেকে জানা যায় যে স্বপ্ন এবং মস্তিষ্কের প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনোভাবে সংযুক্ত। গবেষকদের মতে দীর্ঘদিন ধরেই দেখা গেছে যে স্বপ্ন দেখার ক্ষেত্রে পরিবর্তনগুলো আমাদের শারীরিক, স্নায়বিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের পরিবর্তনকে নির্দেশ করতে পারে এবং কখনও কখনও রোগের প্রাথমিক সূচকও হতে পারে। তবে তাদের মতে এটিই প্রথম প্রমাণ যে দুঃস্বপ্ন লুপাসের মতো গুরুতর অটোইমিউন অবস্থার নিরীক্ষণ করতে সাহায্য করতে পারে এবং রোগী এবং ঘুমের লক্ষণ চিকিত্সকদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করতে পারে। মস্তিষ্কের অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই আবেগপ্রবণ স্বপ্ন দেখেন, কিন্তু এই জ্ঞানীয় লক্ষণগুলো আগে বিবেচিত হয়নি। সম্প্রতি দেখা গেছে বারংবার দুঃস্বপ্ন দেখা ইঙ্গিত হতে পারে পার্কিনসন’স রোগের। পার্কিনসন’স একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক স্নায়ুরোগ। এই রোগে স্নায়ুকোষগুলোর মৃত্যু হতে থাকে। কমে যায় ডোপামিন নামক একটি উপাদানের ক্ষরণ। এই উপাদানটি স্নায়ু সংবাদ পরিবহণ করে। ফলে শ্লথ হয়ে আসে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। বিভিন্ন অঙ্গে কম্পন সৃষ্টি হয় ও পেশির স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায়। দুঃস্বপ্ন, ডিমেনশিয়া রোগের সম্ভাব্য ভবিষ্যদ্বাণী করে, যা আবার ইমিউন সিস্টেমের সাথে যুক্ত। এখন লুপাস রোগের ক্ষেত্রেও একই কথা সত্য বলে মনে হচ্ছে। সুতরাং আমাদের স্বপ্ন সত্যিই আমাদের শরীর সম্বন্ধে অনেক কিছু বলতে পারে, আজ বিজ্ঞানীরাও তাই সন্দেহ করছেন।