থর মরুভূমি, ২০০,০০০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে রাজস্থান আর পাকিস্তানে বিস্তৃত, যা জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। যদিও বিশ্বজুড়ে অনেক মরুভূমি ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার সাথে সম্প্রসারণ হতে পারে তার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, থর মরুভূমি এই প্রবণতার বিপরীতে গিয়ে, পরবর্তী শতাব্দীর মধ্যে প্রকৃতপক্ষে সবুজ হয়ে উঠতে পারে।
আর্থস ফিউচার জার্নালে সদ্য প্রকাশিত গৌহাটির কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাতে পর্যবেক্ষণ এবং জলবায়ু মডেল সিমুলেশনের সংমিশ্রণ ব্যবহার করে, গবেষক দল দেখতে পেয়েছেন যে ভারত ও পাকিস্তানের আধা-শুষ্ক উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গড় বৃষ্টিপাত ১৯০১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১০-৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঝারি গ্রীনহাউস গ্যাসের পরিস্থিতিতে, এই বৃষ্টিপাত ৫০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত প্রত্যাশিত বৃদ্ধি পেতে পারে। এই গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভারতীয় বর্ষার পূর্বমুখী স্থানান্তর ভারতের পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে শুষ্ক অবস্থার পিছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। কারণ ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, এই অঞ্চল একসময়ে বর্ষা মরসুমে সমৃদ্ধ ছিল, যার জন্য সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।
গবেষকরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন যে এই প্রবণতা বিপরীতমুখী হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যেখানে বর্তমান ভারতীয় বর্ষা পশ্চিম দিকে সম্প্রসারিত হয়ে ভারতের পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলগুলোকে একটি আর্দ্র “মৌসুমী” জলবায়ুতে আমূল রূপান্তরিত করতে পারে। এই রূপান্তরে দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা বাড়তে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারত মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলে উষ্ণ জলের টান সক্রিয় ইন্টার-ট্রপিক্যাল কনভারজেন্স জোন (ITCZ) বা নিরক্ষীয় শান্ত বলয়কে পশ্চিমমুখী স্থানান্তর করেছে। এর ফলে, গ্রীষ্মকালে ভারতের পশ্চিম দিকে বৃষ্টি বাড়ছে। গবেষকরা বলছেন যে এই ঘটনাটি ভারতে বর্ষার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে, আর উত্তর-পশ্চিম ভারতের আধা-শুষ্ক অঞ্চলগুলি সম্ভাব্য সবুজায়নের দিকে অগ্রসর হবে।
বর্ষার সময়কাল এবং বৃষ্টিপাতের মাত্রার পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে, তারা বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাস পরিস্থিতিতে ভবিষ্যত পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য একটি জলবায়ু মডেলে আবহাওয়ার ইতিহাস অনুযায়ী তথ্য ও সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রার তথ্য প্রদান করে, দেখেন ভারতীয় বর্ষা পশ্চিম দিকে প্রসারিত হচ্ছে, যার ফলে উত্তর-পূর্বে গড় বৃষ্টিপাত ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষকরা বলেছেন যদিও বর্ষার এই অপ্রত্যাশিত মোড় কিছু ভালো সুযোগ দেবে কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হল, বাস্তুতন্ত্রের সূক্ষ্ম ভারসাম্য এবং পরিবেশের ওপর এই ঘটনার প্রভাব কীভাবে পড়ে তা গুরুত্বপূর্ণ।