রেঞ্জল্যান্ড হল অকর্ষিত তৃণভূমি, ঝোপঝাড়, বনভূমি, জলাভূমি এবং সাভানা যা গৃহপালিত এবং বন্য প্রাণীদের চারণ করার উপযুক্ত স্থান। পৃথিবীর স্থলভাগের অর্ধেকের বেশি অংশ রেঞ্জল্যান্ডের অন্তর্গত। এর মধ্যে মরুভূমি থেকে তৃণভূমি, তুন্দ্রা, ঝোপঝাড়যুক্ত অঞ্চল পড়ে, যা মাংস, ডেয়ারি, উল নানা ফসলের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার। তাছাড়া পৃথিবীর পুষ্টিচক্র, জলচক্র ও কার্বনচক্রে রেঞ্জল্যান্ডের বড়ো ভূমিকা আছে। দঃখের বিষয় জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে ৫০ শতাংশ রেঞ্জল্যান্ড এখন তাদের কার্যকারিতা, সমৃদ্ধি হারাতে বসেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি, অন্যান্য অনেক সমস্যা রেঞ্জল্যান্ডের ধ্বংসের কারণ, যার মধ্যে বেশিরভাগই দুর্বল ভূমি ব্যবস্থাপনাজনিত কারণ। যেমন জমি পরিষ্কার, খনন, অতিরিক্ত পশু চারণের জন্য মাটির পুষ্টি উপাদানের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষয়, ভূমিক্ষয়, লবণাক্তকরণ, ক্ষারীয়করণ এসমস্ত কারণ কোনো স্থানের মাটির খরা ও মরুকরণে অবদান রাখে। জীববিজ্ঞানী পেড্রো মারিয়া হেরেরা ক্যালভো, ইউএন কনভেনশন টু কমব্যাট ডেজার্টফিকেশন (ইউএনসিসিডি) প্রতিবেদনের লেখক ব্যাখ্যা করেছেন পৃথিবীর সমস্ত বায়োম এবং ইকোসিস্টেম জুড়ে ঘটতে থাকা ভূমির অবক্ষয় এবং ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এগুলোই প্রধান চালক।
খাদ্য নিরাপত্তা এবং জমির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টার জন্য লক্ষ লক্ষ হেক্টর রেঞ্জল্যান্ডকে ফসল উৎপাদনের জন্য রূপান্তরিত করা, ভূমি ক্ষয় প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে দিয়েছে আর ফলন হ্রাস পেয়েছে। কিছু অঞ্চলে, সংঘাত এবং সীমান্ত সমস্যার জন্য গবাদি পশুর চলাচলে বাধা দেওয়া হয় যাতে অতিরিক্ত পশুচারণে রেঞ্জল্যান্ডের অবক্ষয় ঘটে। এর সাথে ভূমি ক্ষয়ের জন্য ক্রমবর্ধমান দাবানলেরও অবদান রয়েছে। মধ্য এশিয়ার মঙ্গোলিয়াতে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে। উত্তর আমেরিকাতে তৃণভূমি প্রেইরি, দক্ষিণের মরুভূমি এই ধ্বংসের জন্য তাদের জীববৈচিত্র্য হারাতে বসেছে। প্রতিবেদন সতর্ক করেছে যে তথ্যের অভাবে ভূমি সুরক্ষার দিকে ঠিকমতো জোর দেওয়া হচ্ছেনা। বিশ্বের ৮০ মিলিয়ন রেঞ্জল্যান্ডের মাত্র ১২ শতাংশ বর্তমানে সুরক্ষিত।
রিপোর্টে বলা হয়েছে ভূমির আরও অবক্ষয় বন্ধ করার জন্য ভূমি সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের জন্য জলবায়ু প্রশমন এবং আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। এই রিপোর্ট দেশীয় জ্ঞান, তার সাথে স্থানীয় ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার এবং একক চাষের মতো ক্ষতিকর অনুশীলন কমানোর বিষয়ে পরামর্শ দেয়।