সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াধ, মরুভূমির মাঝে অবস্থিত পৃথিবীর তীব্র গরম এক শহর, যার তাপমাত্রা গরমকালে কখনও কখনও ৫০০ সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। ফলে বাড়িঘর শীতল রাখতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের অধিক ব্যবহার শহরকে আরও উষ্ণ করছে। তার ওপর দ্রুত নগরায়নের ফলে গরম আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরকম বিশ্বব্যাপী ৪৫০টার বেশি শহরের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য শহরের শক্তি খরচের চাহিদা বাড়ছে, তাছাড়া তাপ থেকে স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে মানুষের অসুস্থতা এবং মৃত্যুও ঘটতে পারে। ইউএনএসডব্লিউ সিডনির এক গবেষণা মরুভূমির গরম জলবায়ুতে অবস্থিত প্রধান শহরগুলোর তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস করতে চাইছে, যাতে শক্তি ব্যয় হ্রাস পায়, আর মানুষের জীবনযাপনে কিছুটা সুবিধা হয়। নেচার সিটিস-এ প্রকাশিত এই গবেষণা নানা ধরনের কৌশল বিশদে জানিয়েছে, যাতে সৌদি আরবের রাজধানী শহরের তাপমাত্রা ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি কমানো সম্ভব হয়। শহরে অ্যাসফাল্ট, কংক্রিটের তৈরি বাড়ি বেশি তাপ ধরে রাখে, তার সাথে গাড়ি, কল-কারখানার দূষণ, সবুজের অভাব শহরের তাপমাত্রা বাড়ার জন্য দায়ী। ইউএনএসডব্লিউ গবেষকদের দল রিয়াধের আল মাসিয়াফ এলাকায় ৩৩২৩টা শহুরে ভবনে আটটা ভিন্ন তাপ প্রশমন পরিস্থিতিতে বৃহৎ আকারের শীতল জলবায়ু ও শক্তির সিমুলেশন চালিয়েছে যা শহরের তাপমাত্রা কমানোর সর্বোত্তম কৌশলগুলো দেখিয়েছে যার ফলে বাড়িঘর শীতল রাখার চাহিদা হ্রাস পাবে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন আর্কিটেকচার ল্যাব থেকে ‘সুপার কুল’ বাড়ি বানানোর সরঞ্জাম, সেচকার্যের ফলে চারদিকে সবুজের সমারোহ, ও রেট্রোফিটিং, যাতে গরম কমাতে দেয়াল, সিলিং, মেঝেতে নিরোধক লাগানো হয়, তা শহরের তাপমাত্রা কমাবে। রয়্যাল কমিশন অফ রিয়াধের সহযোগিতায় পরিচালিত এই সমীক্ষায় দেখা হচ্ছে, আধুনিক তাপ প্রশমন প্রযুক্তি একটা শহরে প্রয়োগ করলে শক্তি ক্ষেত্রে কী ধরনের সুবিধা হচ্ছে। এই প্রকল্পে তাপ প্রশমন প্রযুক্তি শহরে গরম হাওয়া কমিয়ে, ঠান্ডা রাখার চাহিদা কমিয়ে মানুষের জীবনযাপন উন্নত করে। রিয়াধের জন্য প্রস্তাবিত তাপ প্রশমনের মধ্যে রয়েছে বাড়ির ছাদ শীতল করার জন্য উপকরণ ব্যবহার করা, যেখানে সূর্যের আলো পড়ে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যাবে, খুব কম তাপ শোষিত হবে, দেয়াল মেঝেতে তাপ নিরোধক ব্যবস্থা করা। গাছের সংখ্যা দ্বিগুণ করা যাতে বাষ্পমোচনের জন্য শীতলতা বাড়ে। এর ফলে শহরে শক্তির চাহিদা ৩৫ শতাংশ কমবে। শহরের তাপমাত্রা কমলে মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি পাবে, তীব্র তাপ থেকে স্বাস্থ্য সমস্যা কমবে, দূষিত পদার্থের ঘনত্ব কমে এবং মানুষের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।