গলার আওয়াজের ওঠানামার মধ্যে দিয়ে জীবজগতে ভাবের আদান প্রদান হয়। মানুষ সবথেকে উন্নত প্রাণী হিসাবে কণ্ঠস্বরের ওঠানামার মধ্যে দিয়ে আবেগ, অনুভূতি এবং কখনও বা নির্দেশ পাঠানোর ক্ষমতা অর্জন করেছে। ভাষা বিবর্তনের পরবর্তী ধাপে কণ্ঠস্বরকে গানের রূপ দিয়েছে। সামাজিক জীবনে ভাষা এবং কণ্ঠস্বরের ভূমিকা অপরিসীম। বিজ্ঞানীরা খুঁজে বেড়ান অজানা রহস্য। হাতির বৃংহনের মধ্যে যুথপতির নির্দেশ থাকে। ঠিক তেমনি মৌমাছিরাও নিজেদের মধ্যে এক অপরূপ সুরে যোগাযোগ করে। একসাথে থাকা, একে অপরের সাথে ভাব বিনিময় এবং খবর দেওয়া নেওয়া এভাবেই হয় জীবজগতে।
এবার বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন স্পার্ম হোয়েল গোত্রের তিমির স্বরলিপি। “নেচার কমিউনিকেশন” পত্রিকার ৭ই মে সংখ্যায় প্রকাশিত এক গবেষণায় কানাডার ওট্টাওয়ার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যুষা শর্মা এবং সহকর্মীরা তিমি মাছের একসাথে চলার সময় তাদের গলার থেকে বেরোনো আওয়াজ বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে তাদের যোগযোগ রক্ষার নিজস্ব এক স্বরলিপি আছে। “টিক টিক’’ করে শুনতে এই আওয়াজগুলোর ছন্দের এবং তালের ভিন্নতার মধ্যে দিয়ে এক তিমি অন্যের সাথে খবরের বিনিময় করে।
২০০৫ সাল থেকে স্যান জেরো এবং সহকর্মীরা ক্যারিবিয়ান সাগরের কাছে ডমিনিকা দ্বীপপুঞ্জের সমুদ্রে সাঁতরে বেড়ানো প্রায় চারশোটি তিমির উপর নজর রাখছিলেন। তারা এই কাজ করার জন্য জলে নামিয়ে দিয়েছিলেন মাইক্রোফোন- গভীর অতলে। তিমিগুলির উপর নজরদারীর জন্য তাদের মধ্যে কয়েকটির উপর সেন্সরও লাগানো হয়েছিল। ২০২০ সালে এই কাজে যোগ দেন বেশকয়েকজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট। জলসায় যেমন নানা বাদ্যযন্ত্র থাকে, ঠিক তেমনি সামুদ্রিক প্রাণী বিশেষজ্ঞদের সাথে কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের হাত মেলানোতে গবেষণার ধার যায় অনেক বেড়ে। প্রত্যুষা শর্মা- ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির কম্পিউটার বিজ্ঞানী। সবমিলিয়ে প্রাণীদের চলাফেরা, সামাজিক আচরণ বোঝার ক্ষেত্রে এই গবেষণা নতুন দিগন্ত খুলবে।
তিমির গান প্রথম শুনেছিলেন ভ্যালেন্টাইন ওয়ারজিংটন এবং উইলিয়াম শেভিল। ১৯৫৯ সালে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণায় তারা দেখিয়েছিলেন যে স্পার্ম হোয়েল ২৩০ ডেসিবেল পর্যন্ত আওয়াজ তুলতে পারে। সে তো ছিল গর্জন। প্রত্যুষাদের গবেষণা তিমির পালকী চলার গানের মতো অন্যান্য যোগাযোগের স্বরলিপি উদ্ধার করেছে। প্রাণীরাও গান গায় নিজের ছন্দে। আমরা মানুষরা গাইতেই ভুলে যাচ্ছি।