গবেষকদের মতে নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ, বর্তমানে অনিয়ন্ত্রিতভাবে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে বেশির ভাগ জীবাণুই মাল্টি ড্রাগ রেজ়িস্ট্যান্ট হয়ে গিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি দশ জনের এক জন রোগী হাসপাতালে থাকাকালীন সংক্রমিত হন। এই সংক্রমণের জন্য দায়ী জীবাণুর বেশির ভাগই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী। ফলে সংক্রমণ রুখতে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করাই একমাত্র পন্থা বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীদের একটি অংশ। অন্যদিকে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সবচেয়ে খারাপ দিকের মধ্যে একটি হল সেগুলো ‘ভালো’ এবং ‘খারাপ’ উভয় ব্যাকটেরিয়াকেই নির্বিচারে শেষ করে। জীবন রক্ষাকারী এইসব ওষুধ মানবদেহে রোগ সৃষ্টিকারী আক্রমণকারীদের ধ্বংস করে কিন্তু সাথে সাথে অন্ত্রের এবং আমদের শরীরের অণুজীবের উপর একটি “অতিরিক্ত” প্রভাব ফেলে। ফলত আমাদের শরীরের কিছু নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক অত্যধিকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। যেমন, অ্যান্টিবায়োটিক চিকিত্সার পরে মহিলাদের মধ্যে ইস্টের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রায় ৩০%।
এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীদের একটি দল। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা লোলামাইসিন নামের একটি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছেন, যা অন্যান্য জীবাণু ছেড়ে শুধু গ্রাম-নেগেটিভ জীবাণুর উপর কাজ করে। গবেষকরা আশাবাদী যে এটি ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিক বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে। গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া আমাদের অন্ত্র, ফুসফুস, মূত্রাশয় এবং রক্তে সংক্রমণের সাধারণ কারণ এবং এদের মারা বেশ কঠিন। আজ বিশ্বব্যাপী মানব স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে চিন্তার কারণ হল বর্তমানে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ। ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক গ্রাম-নেগেটিভ এবং গ্রাম-পজিটিভ উভয় ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে পারে। তাই বিজ্ঞানীরা এমন ওষুধের সন্ধানে ছিলেন যা বিশেষভাবে গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে কারণ গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া বর্তমান অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে বেশি প্রতিরোধী। গবেষকদের মতে ইঁদুরের উপর করা পরীক্ষায় লোলামিসিন অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমকে বাঁচিয়ে রেখে সফলভাবে নিউমোনিয়া এবং রক্তের সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। প্রকৃতপক্ষে, বিজ্ঞানীরা দেখেছেন ইঁদুরের মধ্যে বসবাসকারী গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া বা নন-প্যাথোজেনিক গ্রাম-নেগেটিভ কমেনসাল ব্যাকটেরিয়ার উপর এর কোনও প্রভাব নেই। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা ওই ওষুধের উপর তাদের কাজকে পরিমার্জিত করছেন যাতে ভবিষ্যতে জীবাণুরা লোলামাইসিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে। গবেষণাটি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।