আমরা সবাই বলে থাকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য একে অন্যের পরিপূরক। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ, এই শিক্ষাই গড়ে তুলতে পারে সুস্থ রোগমুক্ত সমাজ। শিক্ষা ও মানুষের আয়ুষ্কাল নিয়ে ল্যান্সেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, উচ্চ শিক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অন্যদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচেন। গবেষণার ফলাফলে বলা হচ্ছে, যে প্রতি এক বছর শিক্ষা বৃদ্ধির সাথে মৃত্যু হারের ঝুঁকি ২% কমে যায়। দেখা গেছে যারা প্রাথমিকভাবে বিদ্যালয়ে ছয় বছর লেখাপড়া সম্পূর্ণ করেছে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি গড়ে ১৩% কম । বিদ্যালয় স্তর উত্তীর্ণ হওয়ার পরে, মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ২৫% কমে যায় এবং ১৮ বছর যাবত শিক্ষালাভ করলে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৪% কমে যায়।
গবেষকরা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ধূমপান এবং অত্যধিক অ্যালকোহল পান করার মতো ঝুঁকির সাথে শিক্ষার প্রভাবের তুলনা করেছেন এবং তারা দেখেছেন স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ফলাফল একই রকম। যেমন, ১৮বছর যাবত শিক্ষার সুবিধা যদি তুলনা করা হয় তবে তা একেবারে সবজি না খাওয়ার পরিবর্তে আদর্শ পরিমাণে শাকসবজি খাওয়ার সাথে তুলনীয়। মোটেও স্কুলে না যাওয়া বেশি অ্যালকোহল পান করা বা ১০ বছর ধরে দিনে দশটি সিগারেট খাওয়ার সমতুল্য নেতিবাচক। ডাঃ টেরজে আন্দ্রেয়াস একেমো, নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ ইনইক্যুয়ালিটিজ -এর প্রধান বলেছেন, শুধুমাত্র স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সুবিধার দিক দিয়ে নয়, শিক্ষা তার নিজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এই সুবিধার মাত্রা পরিমাপ করতে পারা বেশ উল্লেখযোগ্য। মৃত্যুহারের বৈষম্য কমাতে মানুষকে শিক্ষার আরও সুযোগ দেওয়া দরকার, যার ফলে পৃথিবীর সমস্ত দেশের জনসংখ্যায় এর একটা প্রভাব পড়বে।
শিক্ষার সরাসরি প্রভাব যেমন অল্প বয়স্কদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তেমন পঞ্চাশ ও তার বেশি বয়সী ব্যক্তিও এর প্রতিরক্ষার আওতায় আসে। আর এই প্রভাব ধনী, দরিদ্র সব দেশের ক্ষেত্রেই সত্য। ক্রমাগত বৈষম্য রুখতে বিশ্বজুড়ে গুণমান সম্পন্ন শিক্ষা এবং শিক্ষার প্রসারের জন্য সামাজিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। উন্নত শিক্ষা ভালো কর্মসংস্থান এবং উচ্চ আয়ের দিকে নিয়ে যায়, স্বাস্থ্য পরিষেবার দিক দিয়ে আরও ভালো সুবিধা পাওয়া যায় এবং নিজস্ব স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে সহায়তা করে। উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিরা সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক সম্পদ তৈরি করতে পারেন যা তাদের স্বাস্থ্য এবং তাদের আয়ুষ্কালে অবদান রাখে।
এই গবেষণায় ৫৯টি দেশের ৬০০ টিরও বেশি প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে তথ্য শনাক্ত করে ১০০০০টিরও বেশি ডেটা সংগৃহীত করা হয়েছে। এই গবেষণায় পর্যালোচিত বেশিরভাগ অধ্যয়ন উচ্চ-আয়ের দেশ থেকে ছিল, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বিশেষ করে সাব-সাহারান এবং উত্তর আফ্রিকায় আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। এর পরবর্তী গবেষণা যেখানে স্কুলের অভাব আছে, সেখানে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কী প্রভাব পড়ছে তা দেখা দরকার বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।