জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সারা বিশ্বে পড়ছে। অত্যধিক গরম যেমন মানুষদের সারা রাত জাগিয়ে রাখে, দেখা যাচ্ছে পাহাড়ি ছাগলও এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সম্প্রতিক এক গবেষণায় ইতালির বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা পাহাড়ি ছাগলকে নিশাচর জীবনযাপন করতে বাধ্য করছে। এর ফলে এই ছাগলদের শিকার করার জন্য শিকারীদের সুবিধা হচ্ছে। গবেষণা অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট উষ্ণ তাপমাত্রা ইউরোপীয় আল্পস অঞ্চলের পাহাড়ি ছাগলের জীবনধারা পরিবর্তন করছে। পাহাড়ি ছাগলের একটি প্রজাতি, ক্যাপ্রা আইবেক্স, দিনবেলায় সূর্যের তাপ এড়াতে নিজেদের নিশাচরে পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। জীবনধারার এই পরিবর্তন তাদের নেকড়েদের মতো শিকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে, তাদের চলাচলের পথে বাধা দিচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। ইতালির গবেষকরা ২০০৬ থেকে ২০১৯ সাল এই ১৪ বছর সময়কাল ধরে ৪৭টি আইবেক্স প্রজাতির ছাগলকে মোশন সেন্সর এবং গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ট্র্যাকার ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করে। গবেষকদের মতে মানুষের উপস্থিতি বা ভূমি বৈশিষ্ট্যের কারণে তাদের অনুকূল এলাকায় স্থানান্তর হয়তো বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে তারা তাদের দৈন্দিন ক্রিয়াকলাপের ছন্দ পালটে ফেলে।
পুরুষ এবং স্ত্রী ছাগল রাতের বেলায় সক্রিয় থাকলেও, স্ত্রী ছাগলের সাথে ছাগলছানা থাকার ফলে স্ত্রীরা কম সক্রিয় থাকে। গবেষণাপত্র অনুযায়ী নিশাচর শিকারীদের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বে ওইসব অঞ্চলে আইবেক্সের ঘোরাফেরা অনেক বেশি দেখা গেছে। ছানা সমেত স্ত্রীছাগলদের দৈনিক কার্যকলাপ রাতেরবেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন আচরণগত এই পরিবর্তন প্রাথমিকভাবে প্রমাণ করে যে প্রাণীরা দিনেরবেলা তাপ এড়িয়ে রাতের বেলায় সক্রিয় হয়ে উঠছে ফলত নেকড়ের মতো শিকারীদের সুবিধা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও, অন্যান্য কারণ যেমন মানুষের হস্তক্ষেপ, নগর উন্নয়ন, কৃষি, শিকারের ফলে বিশ্বব্যাপী স্তন্যপায়ী প্রজাতিরা নিশাচর হয়ে পড়ছে। নিশাচর জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের কারণে প্রাণীর অভিযোজন এবং পরিবেশগত অবস্থার মধ্যে একটি অমিল ঘটে, যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব প্রাণীদের উপর পড়তে পারে। রাতেরবেলায় সক্রিয় হয়ে ওঠার ফলে প্রাণীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়ে যায় এবং পরজীবীতার মতো আন্তঃসম্পর্কিত দিকগুলো ব্যাহত হয়। রাতের বেলায় সক্রিয় থাকাকালীন, এই সব প্রাণীদের খাবার খোঁজার কার্যক্ষমতা, শিকারী হয়ে ওঠার ক্ষমতা হ্রাস পায়, চলাচলের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত প্রজনন ক্ষমতা কমে যায় ও বেঁচে থাকার ক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমে আসে।