ভারতে বাঘের দেখা মিলল উঁচু পাহাড়ে, প্রায় ১৩ হাজার ফুট উচ্চতায়। এমনটাই প্রমাণ করছে ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা ছবি। দেশের নিরিখে যা ‘রেকর্ড’ বলে দাবি। বিশেষজ্ঞদের মতে বাঘেদের শিকারের জায়গা থেকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে মানুষের হস্তক্ষেপ আর উত্তপ্ত জলবায়ু। ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার (ডব্লিউআইআই) গবেষকরা বলেছেন যে তারা নেপাল, ভুটান এবং তিব্বতের মাঝে অবস্থিত সিকিমের পাহাড়ে বাঘের “একাধিক ছবি” খুঁজে পেয়ে বিস্মিত হয়েছেন। সিকিমের পরিবেশবিদদের মতে বড়ো বড়ো স্তন্যপায়ী প্রাণীদের উপর জলবায়ু পরিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান নৃতাত্ত্বিক চাপের প্রভাব বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞরা অনেক উচ্চতায় ক্যামেরা স্থাপন করেন। এর আগেও শীতল পাহাড়ের উচ্চতায় বাঘ দেখা গেছে। প্রতিবেশী দেশ নেপালে বাঘের দেখা মিলেছে ৪০০০ মিটারে উচ্চতায়। আশা করা হয় যতক্ষণ পর্যাপ্ত শিকার থাকে, ততক্ষণ বাঘরা সাধারণত নীচের উষ্ণ বনাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু বর্তমানে তাদের উঁচু উঁচু পাহাড়ে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে।
যদিও বাঘেরা বিভিন্ন ভূখণ্ড এবং উচ্চতায় ঘোরা ফেরা করতে পারে বলে পরিচিত, তবে কর্বেট টাইগার রিজার্ভে বাঘেদের সবচেয়ে বেশি দেখা যায় হিমালয়ের পাদদেশে, প্রায় ৩৮৫ থেকে ১১০০ মিটার উচ্চতায়। ভূতাত্ত্বিক এবং বাঘ বিশেষজ্ঞ প্রণবেশ সান্যালের মতে হয়তো বাঘেরা তাদের বসতি পরিবর্তন করতে চাইছে। বিগত দুই দশকে, ২০০০ মিটারের কম উচ্চতা বিশিষ্ট অঞ্চলের তুলনায় উঁচু পাহাড়ে তাপমাত্রা দ্রুত উষ্ণ হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাঘের স্থানান্তর ঘটছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে অনেক প্রজাতি তাদের পরিসর পরিবর্তন করছে। ২০২৩ সালে বৈশ্বিক তাপমাত্রার বার্ষিক গড় ছিল প্রাক-শিল্প স্তরের (১৮৫০-১৯০০) থেকে ১.৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি – রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তবে তা বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন ঘটাবে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় ভারতে বাঘের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০,০০০ এর মতো। ২০০২ সালে তা হ্রাস পেয়ে হয় ৩৭০০ এবং চার বছর পরে সর্বকালের সর্বনিম্ন ১৪১১-তে নেমে আসে, কিন্তু তারপর থেকে সংখ্যাটি ক্রমাগত বেড়ে ৩০০০–এর উপরে পৌঁছেছে। গত অর্ধশতাব্দীতে ভারতে বাঘের জন্য তিনগুণেরও বেশি সংরক্ষিত এলাকা হয়েছে, যা প্রায় ৭৫,৭৯৬ কিলোমিটার বর্গ। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাঘেদের উপর পরিবেশগত চাপ বাড়ছে। মানুষের মধ্যে জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং শিকারের কম প্রাপ্যতা বাঘেদের বেঁচে থাকা কঠিন করে তুলেছে।