সোশ্যাল মিডিয়ায় রক্তবীজের মত বাড়তে থাকা অর্থহীন মিম, ভিডিও এবং জিআইফ ইমেজ, এসবের পাশাপাশি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ক্রমশ জায়গা করে নিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ওরফে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। কী না পারে সে! জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, এক মুহূর্তে সেরে দিতে পারে প্রায় সব। জটিল অঙ্ক থেকে কোডিং – সবই করে দিচ্ছে এক নিমেষে।
আসলে আমরা কনজিউমার ক্যাপিটালিজমের সেই যুগে দাঁড়িয়ে আছি যেখানে চোখের পলকে রেডিমেড সমাধান খুঁজে পাওয়াটাকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই। মৌলিক ভাবনার দিন কি তাহলে শেষ? নিশ্চয়ই না। কিন্তু ভয়ের কারণটা অন্যত্র। চ্যাটজিপিটি কর্মচ্যূত করে দিতে পারে সেই সব মানুষদের, যাদের কাজের একটা বড় অংশই হচ্ছে কনটেন্ট তৈরি করা।
কী এই চ্যাটজিপিটি? চ্যাট জিপিটি হল (জেনারেটিভ প্রি-ট্রেনড ট্রান্সফরমার) এর পূর্ণরূপ। এখানে জেনারেটিভ শব্দের অর্থ তৈরি করা, প্রি ট্রেন্ড অর্থাৎ প্রশিক্ষিত ট্রান্সফর্মার। চ্যাট জিপিটিতে ট্রান্সফরমার এমন একটি মেশিন লার্নিং মডেল, যা কোনও কিছুর বিষয়ে সহজেই বুঝতে পারে। কাজেই প্রযুক্তি আর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাস্তবতার সম্পর্কটা অনেকাংশে বদলে দিয়েছে চ্যাট জিপিটি। এবার আরও বুদ্ধিমান, আরও শক্তিশালী এআই মডেল আনল ওপেনএআই। নতুন ভার্সন আগের থেকে আরও বেশি দ্রুত বলে দাবি করা হয়েছে।
এখন আর শুধু টেক্সট নয়, আউটপুটে টেক্সটের পাশাপাশি ফটো, ভিডিয়ো, ভয়েস কম্যান্ড, ডায়াগ্রাম এমনকী কঠিন অঙ্ক পর্যন্ত করে দিচ্ছে এই নতুন ভার্সন। ইতিমধ্যে সেই নমুনাও সবার সামনে তুলে ধরেছেন মিনা মুরাতি এবং তাঁর সহকর্মীরা। বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তিটিকে গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিন এবং সিরির মতো ভয়েস সহকারীর সম্ভাব্য বিকল্প হিসাবে স্বাগত জানিয়েছেন আগেই। ঘটনাচক্রে, ‘নেচার’ পত্রিকায় কিছুদিন আগে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে যে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গবেষণাপত্রের এক জন লেখক হিসেবে চ্যাটজিপিটি-র নাম দিয়েছেন অন্যান্য সহ-লেখকরা, যাঁরা গবেষণাপত্র লিখতে সাহায্য নিয়েছেন চ্যাটজিপিটি-র।
চ্যাট জিপিটির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা কী এবার খোদ মানুষকেই আরও নিষ্ক্রিয় ও বুদ্ধিহীন করে দেবে? নাকি সভ্যতার বিকাশের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব আরও সৃজনশীল হবে – উত্তর দেবে আগামী।