বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার প্রভাব যে শুধু শরীরের উপর পড়ে, তা নয় আমাদের চোখও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পঞ্চাশের পর থেকে চোখের জ্যোতি কমতে থাকে। দৃষ্টিশক্তিও দুর্বল হয়ে পড়ে। বয়সের সাথে সাথে চোখের আর একটা রোগ দেখা দেয়- অ্যাস্টারয়েড হায়ালোসিস (এএইচ)। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির চোখের মণি দেখতে লাগে তারাখচিত রাতের আকাশের মতো। আর তাই এই নামকরণ। আক্রান্ত ব্যক্তিটি বিষয়টি বুঝতে না পারলেও অন্য ব্যক্তিরা তার চোখের তারার দিকে তাকালে অন্ধকার পটভূমিতে আলোর ছটা দেখতে পাবে। এর কারণ আজও চিকিৎসা ক্ষেত্রে অধরা। যদিও মনে করা হয় যে বয়স এই রোগের অন্যতম কারণ, তবে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর সাথে এর সম্পর্ক ভালোভাবে অধ্যয়ন করা হয়নি। বিভিন্ন গবেষণার অনুমান প্রতি ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ১ থেকে ২ জনের মধ্যে রোগটি দেখা যেতে পারে। মানুষ ছাড়া রোগটি কুকুরের মধ্যেও দেখা যায়। তারার মতো এই ছোটো ছোটো কণাগুলো মূলত ক্যালসিয়াম দিয়ে তৈরি যা চোখের লেন্স এবং রেটিনার অন্তবর্তী প্রকোষ্ঠে অবস্থিত ভিট্রিয়াস নামের তরলে থাকে। এই তরল দিয়েই চোখের কাঠামোর বেশিরভাগ অংশ তৈরি। বয়সের সাথে সাথে, ভিট্রিয়াস তরলে, সংক্রমণের কারণে বা প্রদাহের ফলে অথবা রক্তক্ষরণ থেকে ফ্লোটারস দেখা দেয় যা ব্যক্তিটির দৃষ্টিতে আঁকাবাকা দাগের মতো দেখায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি না বুঝতে পারলেও যে দেখছে সে, ব্যক্তিটির চোখের তারায় চকচকে কিছু দাগ দেখতে পায়, ইংরেজিতে বলে “স্পর্কলিং অপাসিটিস”। সরাসরি আলোতে এই ছোটো ছোটো গ্রহাণুর মতো কণাগুলো “ক্রিম-সাদা” রঙের হয়। কিন্তু অপথালমোস্কোপ ব্যবহার করে দেখলে কণাগুলো সোনার মতো চিকচিক করে। সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞানীরা দ্রুত বার্ধক্য, অ্যালজাইমারস রোগের পূর্বে মানসিক অবনতি বা কম বয়সে মৃত্যুর কারণগুলো চিহ্নিত করতে মানুষের চোখে তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করছেন কারণ আমাদের চোখ আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের একমাত্র বাহ্যিক অংশ, তাই শরীরের ভিতরে কী ঘটছে তা প্রকাশ করতে পারে চোখ।