চিকিত্সকরা দীর্ঘদিন ধরে চেতনা বা হুঁশ কতটা আছে দেখার জন্য চোখের তারা বা পিউপিল-এর প্রতিক্রিয়া দেখেছেন। আবার দেখা গেছে যারা সাধারণ অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ খায় তাদের মস্তিষ্কের চারপাশে ভাসমান সেরোটোনিনের বর্ধিত মাত্রার প্রভাবে তারা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়। ইটিএইচ জুরিখ দ্বারা পরিচালিত ইঁদুরের উপর এক গবেষণায় এই ঘটনার কারণ ও প্রক্রিয়াটি দেখার চেষ্টা হয়েছে। গবেষণাটি নেচার নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।
স্নায়ুবিজ্ঞানী নিকোলা গ্রুজিক বলেছেন আমাদের মস্তিষ্কের অবকক্ষ বা হাইপোথালামাসে এক ধরনের নিউরন রয়েছে যা অরেক্সিন বা হাইপোক্রেটিন নামে নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি করে আর এই অরেক্সিন এই সমস্ত পরিবর্তনের জন্য দায়ী। অরেক্সিন এক ধরনের নিউরোপেপটাইড যা উত্তেজনা, জেগে থাকা বা স্বজ্ঞানে থাকা এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের সচেতন অবস্থা ও জেগে থাকা থেকে ঘুমিয়ে পড়ার এই পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে চালনা করে অরেক্সিন। গ্রুজিক এবং তার সহকর্মীরা জীবিত ইঁদুরের এই নির্দিষ্ট কোশগুলো উদ্দীপিত করে এবং টু-ফোটন মাইক্রোস্কোপির সাহায্যে ইঁদুরের ক্রিয়াকলাপ ও পিউপিলের প্রতিক্রিয়া মেলাতে চেষ্টা করেন। তারা দেখেন নিউরন সক্রিয় হলে পিউপিল বা চোখের তারা প্রসারিত হয়।
স্নায়ুবিজ্ঞানী ডেনিস বারডাকভ বলেন যে হাইপোথ্যালামাসের অরেক্সিন নিউরন কতটা সক্রিয় তা বোঝা যায় চোখের তারার প্রসারিত হওয়ায়। তার মতে অরেক্সিন নিউরন সম্পূর্ণরূপে নর-অ্যাড্রেনালিন নিউরনগুলো চালনা করে। আগে ভাবা হয়েছিল নর-অ্যাড্রেনালিন সিস্টেমটি পিউপিলের প্রসারিত হওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু নতুন এই গবেষণা দেখায় যে এই কোশগুলো আসলে অরেক্সিন নিউরনের প্রতিক্রিয়া পরিবর্তন করে। আমরা যদি আবেগপ্রবণ হয়ে পরি বা উত্তেজিত হই বা খুব ভয় পেয়ে যাই অথবা কোনো ওষুধের প্রতিক্রিয়াতেও আমাদের চোখের তারা প্রসারিত হয়। যেহেতু অরেক্সিন নিউরন অনেক প্রণালীতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে, তাই এই কোশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে একাধিক স্নায়বিক ব্যাধি হতে পারে যেমন- নারকোলেপসি এবং অ্যালজাইমার। গবেষকরা তাই তাদের গবেষণা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী।