১৯৮৬ সালের এপ্রিলে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত উত্তর ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিস্ফোরণের পর পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটে। এই বিস্ফোরণের ফলে প্রচুর পরিমাণে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী তেজস্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হয়। অত্যন্ত ভয়াবহ এই পারমাণবিক বিপর্যয় পাওয়ার প্ল্যান্টের আশেপাশের পরিবেশে ক্যান্সার-সৃষ্টিকারী বিকিরণ এবং বিকিরণকারী ধ্বংসাবশেষ নির্গত হওয়ায় ওই এলাকা মানুষের বসবাসের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়ে। বিস্ফোরণের পর ওই অঞ্চল থেকে প্রায় ৩৫০০০০ লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
এখনও বেলারুশ, ইউক্রেন এবং পশ্চিম রাশিয়ার মাটি, জলে এই তেজস্ক্রিয়তা রয়ে গেছে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার প্রায় ৪০ বছর পর এই ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে গাছপালায় ঘেরা বন গড়ে উঠেছে, সেখানে ঘোড়া, নেকড়ে ছত্রাক পুনর্নিবেশ করেছে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষের অনুপস্থিতির কারণে এই সব প্রাণীরা এখানে বিস্তার লাভ করছে।
কিন্তু অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় এই এলাকায় ধূসর নেকড়েরা প্রতিদিন ১১.২৮ মিলিগ্রাম বিকিরণের সংস্পর্শে আসে, যা মানুষের ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া নিরাপত্তা সীমার ছ গুণেরও বেশি। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির একজন বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী এবং ইকোটক্সিকোলজিস্ট কারা লাভ এবং তার দল ২০১৪ সালে এক্সক্লুশন জোন (CEZ) পরিদর্শন করে, নেকড়েদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে এবং রিয়েল টাইমে বিকিরণ এক্সপোজার নিরীক্ষণ করতে তাদের গলায় রেডিও কলার আটকে দিয়েছিলেন। তাদের দ্বারা পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে এই নেকড়েরা তেজস্ক্রিয় পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। লাভের গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ক্যান্সার রোগীদের বিকিরণ চিকিত্সার মতো, চেরনোবিলের নেকড়েরা প্রতিরোধ ব্যবস্থা পরিবর্তন করেছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিকিরণ প্রতিরোধের বিষয়ে জানলে, মানুষের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে উদ্ভাবনী থেরাপি এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। ইউএনইপির জলবায়ু শাখার প্রকৃতির প্রধান, টিম ক্রিস্টোফারসেন বলেছেন, প্রাকৃতিক শক্তির একটি চমকপ্রদ উদাহরণ হল চেরনোবিল অবক্ষয় থেকে পুনরুদ্ধৃত হওয়া। মানুষের হস্তক্ষেপ না থাকলে প্রকৃতি নিজেকে ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়।