ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনের গবেষকরা একটি আইরিশ চুনাপাথরের গুহায় ৪০০০ বছর আগের দুটো দাঁতের মাইক্রোবায়োম উদ্ধার করেছেন। উভয় দাঁতই একজন পুরুষের ছিল, যা থেকে তার মৌখিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। এই মাইক্রোবায়োমগুলোর জেনেটিক বিশ্লেষণ ব্রোঞ্জ যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মৌখিক মাইক্রোএনভায়রনমেন্টের বড়ো পরিবর্তন প্রকাশ করে। আটলান্টিক টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটি এবং এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিকদের সহযোগিতায় পরিচালিত এই গবেষণাটি জার্নালে মলিকুলার বায়োলজি অ্যান্ড ইভোলিউশনে প্রকাশিত হয়েছে। লেখকরা মাড়ির রোগের সাথে যুক্ত বেশ কয়েকটা ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করেছেন এবং দাঁতের ক্ষয়ের জন্য দায়ী স্ট্রেপ্টোকক্কাস মিউটানসের উচ্চ-মানের প্রাচীন জিনোম উদ্ধার করতে পেরেছেন। আধুনিক সময়ে মানুষের মুখে এস. মিউটানস বেশ পরিচিত এক ব্যাকটেরিয়া, কিন্তু পুরোনো জিনোমিক রেকর্ডে এই ব্যাকটেরিয়া বিশেষ পাওয়া যায় নি, তার একটা কারণ হতে পারে যে এর থেকে অ্যাসিড নিঃসৃত হয়, যা দাঁত ক্ষয় করার সাথে ডিএনএ নষ্ট করে দেয়, ফলকগুলোর জীবাশ্ম তৈরি হতে দেয় না। আগের মাইক্রোবায়োম সর্বদা ফসিলের ফলক থেকে পাওয়া গেছে, এই প্রথম সরাসরি দাঁত নিয়ে মাইক্রোবায়োম দেখা সম্ভব হল।
ব্রোঞ্জ যুগের দাঁতে এস.মিউটানস না পাওয়া যাওয়ার অপর কারণ হতে পারে এই ব্যাকটেরিয়া মিষ্টি খাবার পছন্দ করে। প্রত্নতাত্ত্বিক রেকর্ড থেকে দেখা গেছে, খাদ্য হিসেবে দানাশস্যের ব্যবহারের পর দাঁতের ক্ষয় দেখা যাওয়া শুরু হয়। কিন্তু কয়েকশো বছর আগে মিষ্টি জাতীয় খাবার আমাদের খাদ্যতালিকায় প্রবেশ করার সাথে সাথে দাঁতের ক্ষয় বহুগুণ বেড়ে গেল। এস.মিউটানস-এর আধিক্য এবং অন্য স্ট্রেপটোকক্কাই না থাকা থেকে বোঝা যায়, যে মুখের প্রাকৃতিক মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ব্রোঞ্জ যুগের দাঁতে এছাড়াও আরও নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি পাওয়া গেছে যেমন মাড়ির রোগসৃষ্টিকারী ট্যানেরেল্লা ফরসিথিয়া-র এমন স্ট্রেন, যা বর্তমানে দেখা যায় না। জীববৈচিত্র্যের হ্রাসের সাথে এর যোগ আছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হয়তো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন এই উভয় রোগ-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াই ব্রোঞ্জ যুগ থেকে আজ পর্যন্ত নানাভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে শিল্প যুগ থেকে অতি সাম্প্রতিক পরিবর্তন আমাদের মুখের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও পড়েছে।