দুটি ভিন্ন ক্যামেরায় তোলা ছবির সমন্বয়ে একটি নতুন চিত্র তৈরি করে নাসা চাঁদের একটি গর্তের ছবি জনসমক্ষে তুলে ধরেছে যা শত শত কোটি বছর ধরে দিনের আলো দেখেনি। শ্যাকলটন ক্রেটার নামে পরিচিত এই অতি প্রাচীন গর্তটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুর একটি পাহাড়ি অংশে অবস্থিত। পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদের কক্ষপথ যে সমতলে অবস্থিত তা সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর কক্ষপথের সমতলের সাপেক্ষে প্রায় ৫.১৫° হেলে আছে। চাঁদের এই হেলে থাকার কারণে শুধুমাত্র সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এবং চূড়াগুলো সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়। বাকি অঞ্চলগুলো বেশিরভাগ ছায়ায় বিদ্যমান আর সেই কারণেই সূর্যের আড়ালে এমন অনেক জায়গা থাকে যেখানে বরফ জমে থাকে। এই সমস্ত ঘটনা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কৌতূহলী চোখে আগে ধরা পড়েনি। চাঁদের দক্ষিণ মেরু একটি অনাবিষ্কৃত জগৎ যা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা আরও জানতে মরিয়া, কারণ তারা মনে করেন এই অঞ্চলে বরফের আকারে জলের অস্তিত্ব রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে শ্যাকলটন ক্রেটারের কেন্দ্র অন্ধকারাচ্ছন্ন ও হিম শীতল। সেখানকার তাপমাত্রা -১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি নয়। যদি অঞ্চলটিতে কোনো প্রাচীন ধূমকেতুর সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে থাকে সেই সময়কার জলীয় বাষ্প বর্তমানে হিমায়িত হয়ে দৃষ্টির অগোচরে সম্ভবত চাঁদের পৃষ্ঠের নীচে রয়ে গেছে।
চীনের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ২০২৬ সালে চাঁদের জল-বরফের খোঁজে একটি ছোটো ফ্লাইং প্রোব পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। ইতিমধ্যে, নাসা এই অন্ধকারে উঁকি দিতে ‘নাইট গগলস’-এর উপর নির্ভর করছে। বিশেষভাবে ডিজাইন করা যন্ত্রটি শ্যাডোক্যাম নামে পরিচিত এবং এটি ২০২২ সালের আগস্টে একটি কোরিয়ান চন্দ্র উপগ্রহের কক্ষপথে চালু করা হয়েছিল। অন্যান্য ক্যামেরার তুলনায় শ্যাডোক্যাম ছায়াবৃত অঞ্চলে আলোর প্রতি ২০০ গুণ বেশি সংবেদনশীল। পৃথিবী থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে চাঁদকে আলোকিত করে। সেই আলোর উপর নির্ভর করেই চাঁদের অন্ধকার পৃষ্ঠের ছবি তোলা হয়। তাছাড়াও ছবি তুলতে ক্যামেরাটি চাঁদের পাহাড় থেকে সূর্যালোকের প্রতিফলনও ব্যবহার করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত উজ্জ্বল অঞ্চলের ছবিতে অতিরিক্ত আলোর জন্য ছবি ভালো আসে না। যেমন এই বছরের শুরুর দিকে নাসার বিজ্ঞানীরা শ্যাডোক্যাম ব্যবহার করে শ্যাকলটন ক্রেটারের তিনটি আলোকিত জায়গার ছবি তোলার চেষ্টা করেন যে জায়গাগুলো বছরের ৯০% সময়েই সূর্যের আলো দেখতে পায়। ছবিগুলো সূর্যের আলোয় পুরো সাদা দেখায়। তাই সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সূর্যালোকিত অঞ্চলগুলোর ছবি চাঁদের কক্ষপথে থাকা অন্যান্য ক্যামেরার সাহায্যে তোলা ছবি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করেন এবং এই নতুন ছবি প্রকাশ করেন যাতে চাঁদের সেই অঞ্চলের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ ধরা পড়েছে।