গাছপালাও চ্যাঁচায়, আপনার আমার মতো ! তবে আপনি বা আমি যেমনভাবে চিৎকার করি ঠিক সেভাবে নয়, যখন উদ্ভিদের ওপর পারিপার্শ্বিক চাপ বাড়ে মানুষের শ্রবণশক্তির সীমার বাইরে আল্ট্রাসোনিক ফ্রিকোয়েন্সিতে তারা পপিং বা ক্লিক শব্দ করে। সেল পত্রিকায় এক গবেষণায় প্রকাশিত এইভাবেই গাছপালা তাদের আশেপাশের বিশ্বের কাছে নিজেদের দুর্দশার কথা জানায়। বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী ইসরায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের লিলাচ হাদানি বলেছেন, একটি শান্ত সবুজ মাঠেও এমন শব্দ হয় যা আমরা শুনতে পাই না কিন্তু সেই শব্দও কিছু বার্তা বহন করে। এমন কিছু প্রাণি আছে যারা এই শব্দগুলো শুনতে পায়, তাই প্রচুর শাব্দিক মিথস্ক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গাছপালা সর্বদা পোকামাকড় এবং অন্যান্য প্রাণির সাথে যোগাযোগ করে এবং এই জীবরা যোগাযোগের জন্য শব্দ ব্যবহার করে, তাই উদ্ভিদের পক্ষেও শব্দ ব্যবহার করাই স্বাভাবিক। স্ট্রেসের মধ্যে থাকা গাছ কিন্তু আমরা যতটা নিষ্ক্রিয় ভাবি ততটা নিষ্ক্রিয় নয়। তারা কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, যার মধ্যে আমরা সবচেয়ে সহজে যা শনাক্ত করতে পারি, তা হল কিছু শক্তিশালী সুগন্ধ। তারা তাদের রঙ এবং আকৃতি পরিবর্তনও করতে পারে। এইসব পরিবর্তন আশেপাশের অন্যান্য গাছপালাকে বিপদের সংকেত দেয়, যার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সেই গাছপালারা তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা বাড়ায়; বা উদ্ভিদের ক্ষতি করতে পারে এমন কীটপতঙ্গ মোকাবেলা করার জন্য অন্য প্রাণিদের আকৃষ্ট করতে থাকে।
গবেষকরা টমেটো এবং তামাক গাছের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক উদ্ভিদের শব্দ ও এমন কিছু গাছপালার শব্দ রেকর্ড করেছেন যেগুলো জলশূন্য হয়ে গিয়েছিল, এবং কিছু গাছের ডালপালা কেটে তাদের শব্দ নেওয়া হয়েছিল। প্রথমে একটি সাউন্ডপ্রুফ অ্যাকোস্টিক চেম্বারে, তারপর একটি সাধারণ গ্রিনহাউস পরিবেশে এই রেকর্ডিং করা হয়েছিল৷ তারা একটি মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমকে ট্রেনিং দিয়েছেন, যাতে স্বাভাবিক চাপহীন উদ্ভিদ, কাটা গাছ এবং ডিহাইড্রেটেড উদ্ভিদ যে শব্দ উৎপন্ন করে তার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। গাছপালা যে শব্দ নির্গত করে তা এমন একটি ফ্রিকোয়েন্সিতে পপিং বা ক্লিকের মতো শব্দ যা মানুষ করতে পারে না, এক মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে এই শব্দ শনাক্ত করা যায়। স্বাভাবিক চাপহীন গাছপালা খুব একটা শব্দ করে না; তারা শুধু দোলে আর নিঃশব্দে নিজেদের শারীরবৃত্তীয় কাজ করে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ বা চাপে থাকা গাছগুলো অনেক বেশি শব্দ করে, প্রজাতি ভেদে তারা প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৪০ টা পর্যন্ত ক্লিক শব্দ করে। জল পাচ্ছে না এমন গাছপালা জলশূন্যতার লক্ষণ দেখানোর আগে থেকে ক্লিক শব্দ করতে শুরু করে, গাছটি শুকিয়ে যাওয়ার সময়ে এই শব্দ বাড়তে থাকে। এই শব্দ টমেটো, তামাক গাছ ছাড়াও অন্য গাছে পাওয়া যায়। শব্দগুলো কীভাবে তৈরি হচ্ছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে, ডিহাইড্রেটেড উদ্ভিদের কান্ডে ফাঁকা গর্ত তৈরি হয়, ফলে বুদবুদ প্রসারিত হয় ও ভেঙে পড়ে, তার থেকে শব্দ উৎপন্ন হয়।
অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন প্যাথোজেন, কোনো আক্রমণ, অতি বেগনী রশ্মির এক্সপোজার, তাপমাত্রার বৃদ্ধি এবং অন্যান্য প্রতিকূল অবস্থায় গাছপালা এই বুদবুদের শব্দ করে কিনা এখনও জানা যায়নি। এটিও স্পষ্ট নয় যে শব্দ উৎপাদন উদ্ভিদের অভিযোজনের ফল নাকি এটা তাদের স্বভাবিক একটা প্রক্রিয়া। গবেষকরা বর্তমানে এই শব্দগুলির প্রতি অন্যান্য প্রাণি এবং উদ্ভিদ উভয়ের প্রতিক্রিয়া খুঁটিয়ে দেখছেন, এবং সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে শব্দগুলি শনাক্ত এবং তার ব্যাখ্যা অন্বেষণ করছেন।