গণিতের নাম শুনলে যেমন শ্রদ্ধা অনুভূত হয় ঠিক তেমনই কেমন যেন ভয় ভয় লাগে। আমরা প্রায়শই গণিতকে একটি নৈর্ব্যক্তিক, অরাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে দেখি যা যুক্তিকে সমর্থন বা খণ্ডন করতে পারে, কিন্তু যখন আমাদের এটি ব্যবহার করতে হয় তখন আমরা ভীত ও উদ্বিগ্ন বোধ করি।
গণিতবিদ ইউজেনিয়া চেং এই উদ্বেগগুলি দূর করার জন্য তার কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন। শিকাগোর স্কুল অফ আর্ট ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী হিসাবে, তিনি শিল্পীদের গণিত শেখান, আর এই শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই আগে ভাবেননি যে তারা গণিত নিয়ে পড়াশোনা করবে। তিনি প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের উভয়ের জন্য বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, যা গাণিতিক কৌতূহল গড়ে তুলতে এবং গাণিতিক চিন্তাভাবনা আমাদের জীবনকে কীভাবে সমৃদ্ধ করতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করেছে। তার সর্বশেষ লেখা, গণিত কি বাস্তব?: কীভাবে সহজ প্রশ্নগুলো আমাদের গণিতের গভীরতম সত্যের দিকে নিয়ে যায়, তা বর্ণনা করেছে যে আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ প্রশ্নগুলো গণিত বোঝার ক্ষেত্রে কতটা কার্যকরী।
গণিতের ক্ষেত্রে যে কোনো প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত ও কালো-বা-সাদা উত্তর আমরা আশা করি। অনেকসময় কোনো ব্যক্তির গাণিতিক ক্ষমতা আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য আমরা কিছু সহজবোধ্য গণিত সংক্রান্ত প্রশ্নের ঠিক বা ভুল উত্তরকেই একমাত্র গণ্য করে থাকি। গণিতকে সঠিক সমাধান পাওয়ার একটি হাতিয়ারের পরিবর্তে প্রশ্নের উত্থাপন এবং সেই প্রশ্নের সম্ভাবনা অন্বেষণ করার একটি পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই সংখ্যা এবং প্যাটার্ন সম্পর্কে কৌতূহলী, কিন্তু গণিত ক্লাসে প্রায়ই তাদের শেখানো হয় যে গণিতের তথ্যগুলো কোনো প্রশ্ন ছাড়াই গ্রহণ করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষার্থী শিখতে পারে যে মৌলিক সংখ্যাকে একটি পূর্ণ সংখ্যা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় – একটি ভগ্নাংশ বা দশমিক অংশ ছাড়াই একটি ধনাত্মক সংখ্যা – যা শুধুমাত্র নিজেই এবং ১ দ্বারা বিভাজ্য। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে যে ১ সংখ্যাটি কেন একটি মৌলিক সংখ্যা হিসাবে বিবেচিত হয় না। যদি একজন শিক্ষার্থী জিজ্ঞাসা করে কেন নয়, তবে সম্ভবত তাদের বলা হবে এটি ঠিক নয়; এটি তোমায় মেনে নিতে হবে বা এবিষয়ে তুমি পরে পড়বে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, ১ সংখ্যাটিকে মৌলিক সংখ্যা হিসেবে গণ্য না করার একটি যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। চেং-এর মতে, মৌলিক সংখ্যা হল পূর্ণ সংখ্যার মাল্টিপ্লিকেটিভ বিল্ডিং ব্লক; ১-এর চেয়ে বড়ো প্রতিটি পূর্ণ সংখ্যা মৌলিক সংখ্যার গুণফল হিসাবে ভাঙা যেতে পারে। যেহেতু ১ দ্বারা গুণ করলে একটি সংখ্যার গুণফলে কোনো পরিবর্তন আসে না তাই ১ অন্য পূর্ণ সংখ্যা তৈরি করতে প্রয়োজন হয় না, অন্তত যখন গুণকে বিবেচনা করা হয় কারণ যোগের ক্ষেত্রে চিত্রটি সম্পূর্ণ রূপে ভিন্ন। মৌলিক সংখ্যা থেকে ১ সংখ্যাটি বাদ দিলে আমরা ১-এর চেয়ে বড়ো প্রতিটি পূর্ণ সংখ্যাকে প্রাইম সংখ্যার গুণফল হিসেবে ভেঙে দিতে পারি — উদাহরণস্বরূপ, ১২ হল দুটি ২ এবং একটি ৩-এর গুণফল এবং অন্য কোনো প্রাইম সংখ্যার ভিত্তিতে ১২-কে ভাঙা যাবে না। যদি ১ একটি মৌলিক সংখ্যা হিসেবে গণ্য করা হত তবে চিত্রটি ভিন্ন হত। গণিতবিদরা সংখ্যার বৈশিষ্ট্য অন্বেষণের জন্য এই স্বতন্ত্রতা খুঁজে পেয়েছেন, তাই তারা প্রায় এক শতাব্দী আগে প্রাইম সংখ্যার মধ্যে ১ সংখ্যাটিকে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়ে একমত হয়েছিলেন।
মৌলিক সংখ্যার এই উদাহরণটি অনেক সাধারণ প্রশ্নের মধ্যে একটি এবং এটি চেং তার বইতে যুক্তির ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করেছেন। এইরকমই আরও অনেক প্রশ্ন রয়েছে যেমন: কেন ১+১ = ২ হয় বা কেন −(−১) = ১ হয় বা ২+৪ = ৪+২ কেন? এবং, হ্যাঁ, গণিত কি বাস্তব? চেং-এর এই প্রশ্নগুলোর উত্তর শুধুমাত্র গণিত সম্পর্কে আমাদের ধারণার উপরই নয়, গণিত শিক্ষায় ছাত্র এবং শিক্ষক উভয় ক্ষেত্রেই তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপরও ভিত্তি করে তৈরি।