জার্মানির বাভারিয়ার জুলিয়াস-ম্যাক্সিমিলিয়ানস-ইউনিভার্সিটির (জেএমইউ) গবেষকদের পরিচালিত এক গবেষণায় জানা গেছে যে সৌর বিকিরণের মাত্রার বিভিন্নতায় ড্রাগনফ্লাই বা গঙ্গা ফড়িং তাদের রঙ পরিবর্তন করে। এই গবেষণা গঙ্গা ফড়িং-এর মতো শিকারী পতঙ্গের অসাধারণ অভিযোজন কৌশলের উপর আলোকপাত করে। গবেষকরা দেখেছেন যে বসন্ত এবং শরত্কালে, গাঢ় রঙের গঙ্গা ফড়িং-এর আধিক্য দেখা যায় আবার গরমের সময় হালকা রঙের ড্রাগনফ্লাই চারিদিকে উড়ে বেড়ায়। সুতরাং, বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে ড্রাগনফ্লাইদের রঙ অভিযোজন তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ গাঢ় রঙ হালকা রঙের তুলনায় বেশি তাপ শোষণ করে। জেএমইউ-তে গ্লোবাল চেঞ্জ ইকোলজির প্রধান ক্রিশ্চিয়ান হফ ব্যাখ্যা করেছেন যে নির্দিষ্ট সময়ে সমগ্র জনসংখ্যার গড় রঙ সৌর বিকিরণের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তিত হয়। আর তাদের রঙ পরিবর্তন করার এই ক্ষমতা সম্মিলিতভাবে ড্রাগনফ্লাই সম্প্রদায়কে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। পূর্বের গবেষণায় দেখা গেছে যে, উত্তরাঞ্চলে যেখানে তাপমাত্রা বেশ কম আর ঠান্ডার প্রকোপ বেশি, গাঢ় রঙের এবং আকারে বড়ো গঙ্গা ফড়িং প্রজাতি দেখা যায় কারণ তাদের তাপ ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি। বিপরীতভাবে, দক্ষিণাঞ্চলে রৌদ্রের তাপ বেশি থাকায় হালকা রঙের ড্রাগনফ্লাই প্রজাতির আধিক্য দেখা যায় কারণ তাদের হালকা রঙ অতিরিক্ত উত্তাপ থেকে রক্ষা করে। গবেষকদের মতে রঙ, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং ভৌগলিক বন্টনের মধ্যে এক জটিল সম্পর্ক রয়েছে।
ঋতুগত রঙের পরিবর্তনের ঘটনাটি আরও গভীরভাবে দেখার জন্য, ডঃ রবার্তো নোভেলা-ফার্নান্দেজ এবং অধ্যাপক ক্রিশ্চিয়ান হফ ১৯৯০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ইউরোপে ড্রাগনফ্লাই প্রজাতির তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করেছেন। তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে গঙ্গা ফড়িং-এর শরীরের গড় উজ্জ্বলতা শুধুমাত্র উষ্ণ এবং ঠান্ডা অঞ্চলেই আলাদা নয় বরং ঋতুগত বৈচিত্র্যও দেখা যায়। হালকা রঙের প্রজাতিগুলো গরমকালে বিশেষ করে যখন সূর্যের তেজ প্রখর থাকে তখ দেখা যায় এবং গাঢ় রঙের ফড়িং বসন্ত এবং শরত্কালে ঠান্ডা পরিবেশে দেখতে পাওয়া যায়। নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলেন যে পরিবেশগত কারণ এবং প্রজাতির বৈশিষ্ট্যের মধ্যে জটিল সম্পর্ক তাদের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির কারণ সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতে ও তাদের সুরক্ষা করতে সাহায্য করবে।