আমাজন নদীর অববাহিকায় ৭০লক্ষ বর্গকিলোমিটার জুড়ে আমাজন অরণ্য নটা দেশ ব্যাপী বিস্তৃত। এই বিশাল আর্দ্র, ক্রান্তীয় বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্রে সমৃদ্ধ অরণ্য পৃথিবীর ফুসফুস নামে পরিচিত। এই অরণ্য জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার। এই শতকে আমাজন রেনফরেস্ট চারবার মারাত্মক খরার সম্মুখীন হয়েছে, এই ধরনের খরা সাধারণত প্রতি শতাব্দীতে একবারই ঘটে থাকে। আমাদের গ্রহে যে খরার পরিমাণ বাড়ছে এটা তার ইঙ্গিত। প্রকৃতি তার নিজস্ব ছন্দে খরা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে আগের মতো হয়ে যায়, আমাজন রেনফরেস্টও তার ব্যতিক্রম নয়। সামগ্রিকভাবে এই রেনফরেস্ট এখনও খরার মোকাবিলা করতে অসাধারণ স্থিতিস্থাপকতা দেখায়। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে ক্রমবর্ধমান খরার কবল থেকে এর পুনরুদ্ধার হওয়ার গতি ধীর হয়েছে। PNAS-তে প্রকাশিত এক গবেষণায়, আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস বিভাগ এবং কেইউ লিউভেন প্ল্যান্ট ইন্সটিউট-এর গবেষকরা বিশ্লেষণ করেছেন যে আমাজন রেইনফরেস্ট এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিগুলো কতটা সহ্য করতে পারে। গবেষকরা জানিয়েছেন, আমাজন রেনফরেস্ট অনেকটাই অভ্যন্তরীণ বৃষ্টি চক্রের উপর নির্ভর করে, পাতার বাষ্পমোচনের ফলে অরণ্য তার নিজস্ব আংশিক বৃষ্টি সৃষ্টি করে। তবে একটা নির্দিষ্ট অংশে খরার ফলে গাছপালা মরে গেলে বনের ক্ষয় হয় যার জন্য অরণ্যের বাকি অংশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
গবেষকরা ২০০১ সাল থেকে ২০১৯ সাল অবধি স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে দেখেছেন কীভাবে জঙ্গলে গাছের ক্যানোপির রঙ পরিবর্তন হচ্ছে। যার থেকে জঙ্গলের প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য ও স্থিতিস্থাপকতা তারা বুঝতে চেয়েছেন। যদি ক্যানোপির রঙ পরিবর্তন হয়ে টিপিং পয়েন্টে পৌঁছোতো , তাহলে বোঝা যেত গাছের বৈচিত্র্য কমে অরণ্য ধ্বংস হওয়ার পথে। আশার কথা এখনও আমাজনের অরণ্য তার টিপিং পয়েন্টে পৌঁছোয়নি। কিন্তু অরণ্যর নিজেকে পুনরুদ্ধার করার ক্ষমতা কমেছে, বিশেষত দক্ষিণদিকে, যেখানে মানুষের বেশি আনাগোনা সেখানে জঙ্গল বেশ চাপের মুখোমুখি। গবেষকরা আরও দেখেছেন খরার সংখ্যার তুলনায় প্রধানত খরার তীব্রতা এবং দীর্ঘ সময়কালের জন্য বনের ক্ষয় হয়। গবেষকদের মতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরার তীব্রতা এবং সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা। এখন আমাজন রেনফরেস্টের অবশিষ্ট স্থিতিস্থাপকতা রক্ষার চেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।