কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে কোনো ধরনের কথোপকথনকে তার স্পষ্টতা এবং ব্যক্তিটি কতটা মনোযোগ সহকারে শুনছে তার উপর ভিত্তি করে মস্তিষ্ক সেগুলো এনকোড করে। এই আবিষ্কারের ফলে মস্তিষ্ক-নিয়ন্ত্রিত শ্রবণ যন্ত্রের নির্ভুলতা উন্নত করা যেতে পারে। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ড. নিমা মেসগারানীর নেতৃত্বে গবেষকরা রিপোর্ট করেছেন যে একটি জনবহুল স্থানে কোনো কথাবার্তাকে মস্তিষ্ক ভিন্নভাবে এনকোড করে এবং তা নির্ভর করে আমরা কত সহজে শুনতে পাচ্ছি এবং আমরা শোনা কথার উপর মনোযোগ দিচ্ছি কিনা তার উপরে। সম্প্রতি ওপেন-অ্যাক্সেস জার্নাল PLOS বায়োলজিতে প্রকাশিত, গবেষণাটি স্নায়ু রেকর্ডিং এবং কম্পিউটার মডেলিংয়ের সংমিশ্রণ ব্যবহার করে দেখায় যে যখন আমাদের কথাবার্তা অন্য অনেক উচ্চ গলার আওয়াজে হারিয়ে যায় তখন ফোনেটিক তথ্য বিপরীত পরিস্থিতির তুলনায় ভিন্নভাবে এনকোড করা হয়।
অনেক মানুষের ভিড়ে কথাবার্তায় মনোসংযোগ করা কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে যখন অন্যান্য ব্যক্তিরা উচ্চস্বরে কথা বলছে। সমস্ত শব্দকে সমানভাবে বিবর্ধিত করলেও সেই কথাবার্তা শোনা যায় না এবং হিয়ারিং এড বা শ্রবণ সহায়ক ব্যবহার করে শুধু প্রয়োজনীয় কথাবার্তায় মনোযোগ দেওয়াও বাস্তবে বেশ দুরূহ। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে কথোপকথন প্রক্রিয়া করা হয় তা আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মৃগীরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের সময় বসানো ইলেক্ট্রোড থেকে নিউরাল কার্যকলাপ রেকর্ড করেছেন। রোগীদের একটি নির্দিষ্ট কণ্ঠ শুনতে বলা হয়েছিল যেটি মাঝে মাঝে অন্য কণ্ঠের থেকে জোরে ছিল (গ্লিম্পসড) আবার কখনও কখনও তা আস্তে ছিল (মাস্কড)। গবেষকরা মস্তিষ্কের কার্যকলাপের মডেল তৈরি করতে নিউরাল রেকর্ডিং ব্যবহার করেছিলেন। মডেলগুলোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে জোরে বলা কথোপকথনের ফোনেটিক তথ্য মস্তিষ্কের প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি অডিটরি কর্টেক্সে এনকোড করা হয়েছিল এবং সেকেন্ডারি কর্টেক্সে কথাবার্তার এনকোডিং উন্নত ছিল। অন্যদিকে, আস্তে বলা কথাবার্তার ফোনেটিক তথ্য শুধুমাত্র মন দিয়ে শোনা হলে তবেই এনকোড করা হয়েছিল এবং তা জোরে বলা কথোপকথনের স্পিচ এনকোডিং-এর পরে হয়েছিল। যেহেতু এটা অনুমান করা হয়েছে যে জোরে কথোপকথন ও আস্তে বলা কথাবার্তা দুটোর ক্ষেত্রেই ফোনেটিক তথ্য আলাদাভাবে এনকোড করা হয়েছে তাই শুধুমাত্র আস্তে বলা কথোপকথনের অংশের পাঠোদ্ধার করার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হলে মস্তিষ্ক-নিয়ন্ত্রিত শ্রবণযন্ত্রের মনোযোগ সহকারে শোনা ও তা পাঠোদ্ধার করাকে উন্নত করা যেতে পারে। অধ্যয়নের প্রধান লেখক বিনয় রাঘবন বলেছেন যে কোলাহলপূর্ণ জায়গায় কারো কথা শোনার সময়, আশপাশের শব্দ খুব জোরে হলে আমরা যা শুনতে পাইনি আমাদের মস্তিষ্ক তা পুনরুদ্ধার করে। আবার মস্তিষ্ক এমন কিছু কথোপকথনও ধরতে পারে যার দিকে আমরা মনোযোগ দিতে পারি না।